কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে গত সোমবার (২৫ এপ্রিল)। এরপর থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর শুরু হয়েছে জোর প্রস্তুতি ।
তবে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে বিএনপির দলীয়ভাবে অংশগ্রহণের সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন জেলার ও কেন্দ্রের দায়িত্বশীল নেতারা। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপি দলীয়ভাবে প্রার্থী দেয়নি। তবে বিএনপি কুসিক নির্বাচন নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানায়নি। বর্তমান মেয়র বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু বিএনপি নির্বাচনে না গেলেও তিনি আবারও নাগরিক কমিটির ব্যানারে কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বলে তার ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন।
অপরদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাতের নাম একক প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত ১৩ এপ্রিল বিকেলে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মহানগর আওয়ামী লীগ সর্বসম্মতিক্রমে একক প্রার্থী নির্বাচন করলেও বিগত নির্বাচনে দলের দুই বিদ্রোহী প্রার্থীসহ অন্তত অর্ধডজন নেতা দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন বলে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন।
তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির সদস্য ও কুমিল্লা চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ড্রাটিজের সভাপতি মাসুদ পারভেজ খান ইমরান, মহানগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক নুর উর রহমান মাহমুদ তানিম, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক কবিরুল ইসলাম শিকদার, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক আনিসুর রহমান মিঠু, আওয়ামী লীগ নেতা কাজী ফারুক আহম্মেদ। তারা ছাড়াও আলোচনায় আছে সংরক্ষিত মহিলা সাংসদ মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আঞ্জুম সুলতান সীমা, জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক আলহাজ মো. ওমর ফারুক, আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স এর চেয়ারম্যান আফতাবুল ইসলাম মঞ্জুর নাম।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ১ মার্চ থেকে নিজেকে মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চেয়ে নগরীতে বিলবোর্ড, ফেস্টুন টানানোর পাশাপাশি পোস্টার সাঁটিয়াছেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত। আরফানুল হক আ ক ম বাহাউদ্দিন এমপির ঘনিষ্ঠজন। ২০১৭ সাল থেকে তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন। ছাত্র জীবনে তিনি জামায়াত-শিবিরের হাতে আহত হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ থেকে ফিরে এসেছেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি যুবলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাকে ঘিরে সিটি নির্বাচনে মহানগর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা একাট্টা হয়ে মাঠে নেমেছেন।
সিটি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রসঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আকম বাহাউদ্দিন বাহার এমপি বলেন, ‘কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ আজ অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী ও সুসংগঠিত। মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় নগরীর ২৭ ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের সর্বসম্মতিক্রমে মেয়র পদে দলীয় একক প্রার্থী হিসেবে আরফানুল হকের নাম প্রস্তাব করে। এ প্রস্তাব রেজল্যুশন করে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের কাছে আরফানুল হকের নাম পাঠানো হবে। এটা দলীয় সিদ্ধান্ত, কারও একক সিদ্ধান্ত নয়।’
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুমিল্লা সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, বিএনপি নির্বাচনে গেলে দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। আর নির্বাচনে না গেলে আমার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক শুভাকাঙ্ক্ষী রয়েছে তাদের সঙ্গে আলোচনা করব। আমি পৌরসভার একবার ও সিটির দুবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। আমার অনেক নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষী রয়েছে তাদের মতামতের পর সিদ্ধান্ত নেব।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিন উর রশিদ ইয়াছিন বলেন, ‘কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রীয় কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। বিএনপি নির্বাচনে যাচ্ছে না। কারণ এ সরকারের আমলে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না। তাই কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই।’
উল্লেখ্য, ঘোষিত তফসিলে, কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ১৭ মে। মনোনয়নপত্র বাছাই ১৯ মে ও প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৬ মে। প্রতীক বরাদ্দ ২৭ মে এবং ভোটগ্রহণ ১৫ জুন। সর্বশেষ কুমিল্লা সিটিতে ভোটগ্রহণ হয়েছিল ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ। ২০১৭ সালের নির্বাচনে জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল হক সাক্কু দ্বিতীয়বারের মতো এ সিটিতে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ সিটিতে সে সময় ভোট হয়েছিল ১০৩টি কেন্দ্রে। মোট ভোটার ছিল ২ লাখ ৭ হাজার ৫৬৬ জন। ২০১১ সালের ১০ জুলাই কুমিল্লা সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি প্রথম এবং ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ দ্বিতীয় দফা নির্বাচন হয়। দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত ও মনোনীত প্রার্থী মেয়র পদে পরাজিত হন। বর্তমান মেয়রের মেয়াদ ১৭ মে শেষ হচ্ছে।