পানির অপর নাম জীবন। টিকে থাকতে প্রত্যেক প্রাণীর পানি গ্রহণ অত্যাবশ্যক। আমাদের শরীরের ৭০ ভাগই পানি। তাই শরীর সুস্থ রাখতে একজন প্রাপ্তবয়স্ককে অবশ্যই দৈনিক তিন লিটার পানি পান করা উচিত। শরীরের বর্জ্য বের করে দিতে, শরীরের তাপমাত্রা রক্ষায়, সংবেদনশীল টিস্যু সুরক্ষাসহ বহু কারণে পরিমিত পরিমাণে পানি খাওয়া দরকার।
একই সঙ্গে করোনাভাইরাস, গরম কাল ও রোজা পড়ে যাওয়ায় আমাদের শরীরে প্রচণ্ড পানি স্বল্পতা দেখা দেয়। তাই আমাদের বেশি বেশি পানি পান করা প্রয়োজন। কেননা, রোজার সময় গরমের মধ্যে প্রায় ১৪-১৫ ঘণ্টা আমাদের না খেয়ে থাকতে হয়। যার ফলে শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। আর তাই শরীর সুস্থ রাখতে বেশি বেশি পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি।
পানি পান করা নিয়ে হেলাফেলা করা আমাদের স্বভাবে দাঁড়িয়েছে। অথচ পর্যাপ্ত পানি পান যে আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী, তা একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারা যায়। চিকিৎসকরাও পানি পানের দিকটায় বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমরা উদাসীন থাকি। তবে সুস্থ থাকতে চাইলে এই উদাসীনতা বাদ দিতে হবে এখনই। বরং এই রোজায় পানি পান করতে হবে আরও বেশি।
পর্যাপ্ত পানি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা সচল রাখে, যা করোনাভাইরাস ঠেকানোর কাজে সহায়তা করে। আবার অন্যদিকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পানি কিন্তু বাড়ায় শরীরে প্রদাহের প্রবণতা, যার হাত ধরে বাড়ে অন্য বিপদ। কাজেই পানি পান করতে হবে শরীরের প্রয়োজন বুঝে। শরীরের ধরন, ক্রনিক অসুখ, গঠনপ্রকৃতি, হাড় বা হৃদ্রোগের সমস্যা ইত্যাদি ফ্যক্টর বুঝে চিকিৎসক ঠিক করে দেবেন, কতটুকু পানি শরীরের জন্য প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একেকজনের শরীরের অবস্থা ও ধরন অনুযায়ী পানি পানের পরিমাণ ঠিক করা উচিত। সাধারণত সুস্থ মানুষ ২.৫-৩ লিটার পানি খেতে পারেন। খুব বেশি ব্যায়াম ও ঘরের কাজ করলে প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষ ৩.৫-৪ লিটার খেতে পারেন। তবে তিন লিটারের বেশি পানি পান করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ, অতিরিক্ত পানির কিছু ক্ষতিকর দিকও আছে।
শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী পানি পান করলে করোনা ঠেকানো ছাড়াও এই তীব্র গরমে রোজায় অনেক উপকার মিলবে। পানি পান করলে ক্লান্তি, ঘুম-ঘুম ভাবের বদলে শরীরে ফিরে আসে সতেজ ভাব। ইফতার ও সেহরির মধ্যকার সময়টায় অল্প বিরতি দিয়ে পানি পান করলে শরীর বাড়তি শক্তি পাবে।
শরীরে মাত্র ১-৩ শতাংশ পানি কমে গেলেই মেজাজ খারাপ হয়, শক্তি কমে, টান পড়ে স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতায়ও। রোজায় যেহেতু দিনের বেলা সম্ভব নয়, তাই যেটুকু সময় খাবার খাওয়া যাবে, সেটুকু সময় পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। সুস্থ থাকতে এর বিকল্প নেই।