ব্যাংকগুলোকে এখন থেকে সুদ মওকুফের আগে তার যৌক্তিকতা নিরূপণ করতে হবে। সুনির্দিষ্ট কিছু কারণ ছাড়া সুদ মওকুফ করা যাবে না। চাইলেই আর ঢালাওভাবে সুদ মওকুফ করতে পারবে না কোনো ব্যাংক।
তবে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির বা জাল জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্ট খেলাপি ঋণের সুদ কোনো ক্রমেই মওকুফ করা যাবে না।
কেননা ঢালাওভাবে সুদ মওকুফের ফলে ব্যাংকের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে। তবে এ সার্কুলারের আগেই বড় বড় ঋণখেলাপি বা জালিয়াতরা তাদের ঋণের বিপরীতে সুদ মওকুফ সুবিধা নিয়ে নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়, সুদ মওকুফের আগে ব্যাংকের আর্থিক ব্যবস্থায় চাপ পড়বে কি না-তা পর্যালোচনা করতে হবে। এতে যদি মনে হয় ব্যাংকের আর্থিক ব্যবস্থাপনার ওপর চাপ পড়বে, তবে সুদ মওকুফে সতর্ক হতে হবে। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক, পরিচালকের পরিবারের সদস্য বা পরিচালকের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঋণের সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংককে আগাম অনুমোদন নিতে হবে।
সার্কুলারে বলা হয়, কোনো ক্রমেই ব্যাংকের মূল ঋণ মওকুফ করা যাবে না। জাল জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্ট বা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের ঋণের সুদ মওকুফ করা যাবে না। ব্যাংকের আয়ের চেয়ে বেশি সুদ মওকুফ করা যাবে না। ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত মূল ঋণের সুদ মওকুফের ক্ষমতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ওপর ন্যস্ত করা যাবে। এর বেশি ঋণের সুদ মওকুফ করতে হলে ব্যাংকের পর্ষদের অনুমোদন নিতে হবে। সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে ব্যাংকের তহবিল ব্যয় আদায় নিশ্চিত করতে হবে।
‘তবে কিছু ক্ষেত্রে এ নীতিমালা শিথিল করা যাবে। যেমন তিন বছর ধরে কোনো প্রকল্প বন্ধ, ঋণের জামানত, সহ-জামানত, প্রকল্পের সম্পত্তি, প্রকল্পের উদ্যোক্তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি বিক্রি করেও যদি তহবিল ব্যয় আদায় করা সম্ভব না হয় সে ক্ষেত্রে তহবিল ব্যয়ের চেয়ে কম সুদ আদায় করা যাবে। একই সাথে পাওনা আদায়ের লক্ষ্যে আইনগতসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এতেও পাওনা আদায় করা সম্ভব না হলে তহবিল ব্যয়ের চেয়ে কম সুদ আদায় করা যাবে।’
এতে আরো বলা হয়, তহবিল ব্যয়ের চেয়ে বেশি সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগের মাধ্যমে তদন্ত করতে হবে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যাংকের ইন্টারনাল কন্ট্রোল অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স বিভাগের প্রধানের মতামত নিতে হবে। যে সব ক্ষেত্রে গ্রাহকের আর্থিক বিবরণী নেওয়া প্রয়োজন সেগুলো নিতে হবে। কমপক্ষে তিন বছরের আর্থিক বিবরণী পর্যালোচনা করে যদি গ্রাহকের নিট মুনাফা পাওয়া যায় বা গ্রাহকের মূলধন ইতিবাচক পরিলক্ষিত হয় তবে ওই গ্রাহকের সুদ মওকুফ করা যাবে না। সরকারি ব্যাংকের সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনাসহ সরকারি নির্দেশনা মানতে হবে।
নির্দেশনায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সময় সময় দেয়া সুদ মওকুফের নির্দেশনা পরিপালন করতে বলা হয়েছে।