নিউমার্কেটের দোকান কর্মচারী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ থেকে রক্ষা পেল না রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স। মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) দুপুর ১টার দিকে নীলক্ষেত এলাকা থেকে ঢাকা কলেজ পেরিয়ে যাওয়ার সময় রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি ভাঙচুর করেন ব্যবসায়ীরা।
হামলার শিকার অ্যাম্বুলেন্স চালক জাহাঙ্গীর আলম সংবাদমাধ্যমকে জানান, রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল থেকে অপারেশনের রোগী নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে যাওয়ার পথে ব্যবসায়ীদের হামলার শিকার হয় অ্যাম্বুলেন্সটি।
তিনি বলেন, আমি রোগী নিয়ে যাওয়ার সময় প্রথমে ছাত্ররা আটকায়। গাড়িতে রোগী দেখে তারা যেতে দেয়। কিন্তু মার্কেটের সামনে গেলেই অতর্কিত আমার গাড়িতে হামলা করে দোকানদাররা। আমাকেও আহত করে।
রোগী কোথায় জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর বলেন, আমি কোনো রকম রোগীকে মেডিকেলে রেখে চলে এসেছি। তবে এ বিষয়ে ব্যবসায়ী ও দোকানকর্মীদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সোমবার (১৮ এপ্রিল) রাতের সংঘর্ষের জের ধরে মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে আবারও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা। সংঘর্ষের কারণে ওই এলাকায় বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের যানবাহন। ভোগান্তিতে পড়েন শত শত পথচারী। ফলে অন্য সড়কগুলোতেও দেখা দেয় তীব্র যানজট।
ঢাকা কলেজের মূল ফটকের ভেতরে থাকা ছাত্রদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে ঢাকা কলেজের ভবনের ছাদ থেকে নিউমার্কেটের দিকে ইটপাটকেল ছুটতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ সংঘর্ষ শুরু হলে ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
ছাত্রদের মধ্যে অনেককে হেলমেট পরে হাতে লাঠি নিয়ে সংঘর্ষে জড়াতে দেখা গেছে। ইটের আঘাতে বেশ কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে।
নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা ওভারব্রিজের নিচেও অবস্থান নেন, অন্যদিকে চন্দ্রিমা মার্কেটের সামনে অবস্থান নেন ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীরা। বেলা সোয়া ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে অন্তত তিনটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
রাতের সংঘর্ষের জেরে সকাল থেকে নীলক্ষেত মোড়ে জড়ো হয়ে রাস্তা অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। ফলে সায়েন্স ল্যাবরেটরি থেকে আজিমপুর পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশের যান চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী ও দুই ব্যবসায়ী আহত হন। আহত হন বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও। এছাড়া সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সময় টিভির প্রতিবেদকসহ ৬ সাংবাদিকের ওপর হামলা করেন ব্যবসায়ীরা।
এর আগে সোমবার রাত ১২টার দিকে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ‘কথাকাটাকাটির জেরে’ নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ হয়। আড়াই ঘণ্টা ধরে দুপক্ষের মধ্যে দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
ঢাকা কলেজের একাধিক ছাত্র জানান, তাদের এক সহপাঠীর ওপর নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা হামলা চানান। এর প্রতিবাদে ঢাকা কলেজের আবাসিক হল থেকে কয়েকশ’ ছাত্র লাঠিসোঁটা নিয়ে হল থেকে বের হয়ে নিউমার্কেটে যায়। এ সময় নিউমার্কেটের কিছু দোকান ভাঙচুর করা হয়। পাশাপাশি কিছু ব্যবসায়ীকে মারধর করা হয়। এরপর নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে বেরোলে দুপক্ষের সংঘর্ষ শুরু হয়।
অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, রাতে ঢাকা কলেজের কয়েকজন ছাত্র নিউমার্কেটের একটি ফাস্টফুডের দোকানে খাবার খেতে এসেছিল। খেয়ে তারা টাকা না দিয়েই চলে যাচ্ছিল। এ নিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে দোকানের লোকজনের তর্কাতর্কি হয়। এরপরই ঢাকা কলেজের ছাত্ররা এসে দোকান ভাঙচুর করতে থাকে। পরে ব্যবসায়ীরা একসঙ্গে বের হয়ে আসেন।