রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে গতকাল সারা দিনই ছিল তীব্র যানজট। গুলিস্তান এলাকা থেকে তোলা ছবি : আবদুল্লাহ আল বাপ্পী –
ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে রাজধানী ঢাকার যানজট। রমজানের প্রথম দিন থেকে শুরু হওয়া অসহনীয় যানজট প্রতিদিনই তার রূপ পাল্টে ভিন্ন মাত্রা ধারণ করছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা। যানজটের দুর্ভোগ রাজধানীবাসীর জন্য নতুন নয়। তবে, রমজানে এ দুর্ভোগের মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তীব্র গরমে রাস্তায় ঘণ্টা পর ঘণ্টা আটকে থেকে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। গতকাল রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে নগরজুড়ে অসহনীয় রূপ ধারণ করেছে যানজট। সামান্য পথ অতিক্রম করতে সময় লাগছে কয়েক ঘণ্টা। মন্থরগতিতে চলা যানবাহনে বসে হাঁসফাঁস করেছেন বিভিন্ন বয়সী যাত্রীরা। সকালে ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতায় যান চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে যানজট। যানজটের কারণে অনেক রোজাদার গাড়িতে বসেই সারছেন ইফতার।
অনেকেই বলছেন, প্রতি বছরই রমজানে যানজট কিছুটা বৃদ্ধি হয়। তবে এ বছর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, মেট্রোরেল নির্মাণ, এলিভেটর এক্সপ্রেসওয়েসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজে যানবাহন চলাচল বিঘœ হচ্ছে। এ ছাড়াও রাস্তায় ধীরগতির যানবাহন, উল্টোপথে গাড়ি চলাসহ নানা কারণে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। আবার সড়কের দু’পাশে অবৈধ যানবাহন পার্কিং ও ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি যানবাহনকে রেজিস্ট্রেশন দান যানজটের অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। ঘণ্টায় যানবাহনের গতি নেমে এসেছে তিন কিলোমিটারের নিচে।
গতকাল সকালে বিমানবন্দর সড়ক, ডিআইটি সড়ক, খিলগাঁও রেলগেট, বাসাবো, মানিকনগর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, ফকিরাপুল, পল্টন, শাহবাগ, কাকরাইল, বাংলামটর, কাওরানবাজার, বনানী, মহাখালী, মিরপুর, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন এলাকায় তীব্র যানজট দেখা গেছে। প্রতিটি মোড় অতিক্রম করতে যানবাহনগুলোকে তিন থেকে চারটি সিগন্যালের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যানবাহন নিয়ন্ত্রণে সকাল থেকেই ট্রাফিক পুলিশকে দেখা গেছে হিমশিম খেতে।
মতিঝিলের একটি ব্যাংক কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, তার বাসা খিলগাঁও তালতলা। প্রথমে কিছুদিন রিকশা বা লেগুনায় করে অফিসে আসার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু প্রতিদিনই লেট করে অফিসে পৌঁছাতে হয়েছে তাকে। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে তিনি সকালে বাসা থেকে বের হয়ে আর যানবাহনে উঠছেন। হেঁটে অফিসে আসছেন। এতে একটু কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে অফিসে পৌঁছাতে পারছেন। তার কাছেই থাকা মিরপুর থেকে মতিঝিলে আসা আলেয়া বেগম বলেন, খিলগাঁও থেকে কষ্ট করে হেঁটে আসা যায়। কিন্তু মিরপুর থেকে হেঁটে মতিঝিলে আসা অসম্ভব। তাই বাধ্য হয়েই তাকে বাসে আসতে হয়।
তিনি বলেন, তার প্রথম যুদ্ধ শুরু হয় বাস পাওয়া নিয়ে। আধা ঘণ্টা এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে বাস পেলেও পরবর্তী যুদ্ধ শুরু হয় যানজটের সাথে। মিরপুর থেকে মতিঝিল পৌঁছালে শুধু মোড় বা সিগন্যাল নয়, পুরো রাস্তায় যেন দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। শরিফুল ইসলাম বলেন, শুধু প্রধান সড়কে নয়, যানজট এখন অলিগলিতেও চলে গেছে। ১০ মিনিটের পথ যেতে সময় লাগছে এক ঘণ্টার বেশি। কোনো সংস্থাই কাজ করছে না, মাঝেমধ্যে মুখরোচক কথা বলে নগরবাসীকে সান্ত্বনা দিতে চায়।