বিদেশী কোনো পরামর্শে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন হবে বাংলাদেশে। বিএনপি নির্বাচনে যাবে কি, যাবে না তার পরামর্শ দিবে জনগণ। অন্য কেউ না। জনগণ যেদিন পরামর্শ দিবে, জনগণের আস্থা যেদিন হবে যে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। জনগণ নিজের হাতে ভোট দিতে পারবে, মেশিনের মাধ্যমে নয়। সেদিন জনগণ বলবে আপনারা নির্বাচনে যান। জনগণের দল হিসেবে বিএনপি নির্বাচনে যাবে। বিদেশি কোনো পরামর্শে নয়।’
শনিবার দুপুরে চন্দ্রিমা উদ্যানে অবস্থিত বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে পুস্পার্ঘ অর্পন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। সিলেট জেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বিএনপিকে নির্বাচনমুখী করতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। গত ৪ এপ্রিল রাতে ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তিনি এ সহায়তা চান। বৈঠকে বাংলাদেশের অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র ও নির্বাচনের তাগিদ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল একটি মধ্যপন্থী গণতান্ত্রিক দল। আজ বাংলাদেশে যে সঙ্কট তা হচ্ছে দেশে গণতন্ত্র নাই, মানুষের অধিকার নাই, ভোটের অধিকার নাই, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যারকাণ্ড, মামলা, হামলা এবং দ্রব্যমূল্যের ঊদ্ধগতি৷ স্বৈরাচারী সরকার, গায়ের জোরের সরকার সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে। দেশ আজ ধ্বংসের কিনারায় গিয়ে পৌঁছেছে।’
‘আমরা লজ্জিত, বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমেরিকায় গিয়ে ধর্ণা দিচ্ছেন। ধর্ণার ইংরেজি হচ্ছে লবিং। কয়েকটি দিন আগেও আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছে বিএনপি নাকি ধর্ণা দেয়। আজ বাংলাদেশের মানুষের কাছে প্রমাণিত, ধর্ণা কারা দিচ্ছে। এই সরকার সবদিকে যখন মনে করছে তাদের ব্যার্থতা, সকল ক্ষেত্রে তাদের পরাজয় তখন তারা বিদেশিদের সহযোগিতা চাচ্ছে। এটা অত্যন্ত ন্যাকারজনক।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সুষ্ঠু অংশগ্রহণমুলক নির্বাচন চাই। এটা তো বেশি কিছু কথা নয়। এই সরকার পর পর তিনটি জাতীয় নির্বাচন এবং স্থানীয় নির্বাচনে যে কারচুপি, যে ডাকাতি করেছে তাতে জনগণ ভোটের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। আমাদেরও আস্থা নাই। এই সরকার ক্ষমতায় থাকতে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ গ্রহণযোগ নির্বাচন হবে না। এটা আমরা ঘোষণা করেছি। এখন সরকারের উচিত পদত্যাগ করে নির্দলী নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়া। তাহলে দেশের সকল দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। নির্বাচনের প্রতি মানুষের আস্থা আসবে। বিএনপিও জনগণের দল হিসেবে সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমেরিকায় গিয়ে, আমেরিকাকে অনুরোধ করেছে, তারা যেন বিএনপিকে বলে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য। এটা তো অন্য কেউ বলার বিষয় না। আমরা মনে করি এদেশের মানুষ যেদিন বলবে তারা ভোট দিতে পারবে, তাদের আস্থা ফিরে এসেছে সেদিন বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।
‘এই সরকারের অধীনে কখনো সুষ্ঠু নিরেপক্ষ নির্বাচন হয় নাই, ভবিষ্যতেও হবে না। সমাধান আমেরিকায় গিয়ে অনুরোধ করা নয়। আমিরেকার কাছে ধর্ণা দেয়া নয়। সমাধান হচ্ছে, এই ফ্যাসিবাদী সরকরের অনতিবিলম্ব পদত্যাগ করতে হবে এবং নির্দলীয় নিরেপক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন হতে হবে। জনগণ যাদের নির্বাচিত করে তারাই সরকার গঠন করবে। এর জন্য আমেরিকায় গিয়ে ধর্ণা দেয়ার অর্থ দেখি না। এতে প্রমাণিত হয় সরকার কী পরিমাণ দূর্বল হয়ে পড়েছে!
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার নাই। সে জন্য র্যাবসহ বিভিন্ন কর্মকর্তাদের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এটা দেশের জন্য সম্মানের নয়। বিদেশে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। সেই ব্যাপারেও এখানে সমাধান না করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমেরিকা গিয়ে তাবেদারি করছে।
এ সময় উপস্থাপনা ছিলেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেটএম জাহিদ হোসেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম, সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ শামিম আহমদ প্রমুখ।