পাকিস্তানের ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি গত ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনীত অনাস্থা প্রস্তাব খারিজের রায় দেন। এরপরই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি ইমরান খানের আহ্বানে পার্লামেন্ট ভেঙে দেন। তবে বৃহস্পতিবার কাসিম সুরির অনাস্থা প্রস্তাব বাতিলের সিদ্ধান্ত ও সংসদ ভেঙে দেওয়াকে অবৈধ বলে রায় দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। এতে করে দেশটির পার্লামেন্ট পুনর্বহাল হলো এবং আগামী শনিবার ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে ভোটাভুটি হবে।
এদিকে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর এক টুইট বার্তায় ইমরান খান বলেছেন, তিনি দেশের জন্য শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করবেন। তিনি জানিয়েছেন, আজ শুক্রবার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন। একই সঙ্গে তিনি জানান, আজ শুক্রবার মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছেন তিনি।
প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়ালের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ গতকাল রায়ে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতিকে আইনসভা ভেঙে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়ার অধিকার প্রধানমন্ত্রীর নেই। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নেওয়া সব সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে।’ পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল এর আগে বলেছিলেন যে জাতীয় স্বার্থ এবং বাস্তবতা দেখেই আদালত এগিয়ে যাবে। বিচারপতি বান্দিয়ালের নেতৃত্বে এবং বিচারপতি মুনীব আখতার, বিচারপতি আইজাজুল আহসান, বিচারপতি মাজহার আলম ও বিচারপতি জামাল খান মন্দোখেলের সমন্বয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ মামলাটির শুনানি করেছে।
ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা বিরোধী দলগুলোর অনাস্থা প্রস্তাব ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে ডেপুটি স্পিকারের খারিজ করার বৈধতা নিয়ে বুধবার রাতে সুপ্রিম কোর্টের রায় দেওয়ার কথা ছিল।
এ নিয়ে শুনানির দ্বিতীয় দিন গত সোমবার প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল বলেছিলেন, ‘সংবিধানের ৫ অনুচ্ছেদ উদ্ধৃত করেও স্পিকার অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে দিতে পারেন না।’ গতকাল সকালে শুনানি শুরুর পরপরই তিনি বলেন, বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরির খারিজ করে দেওয়া সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। এ সিদ্ধান্ত ‘ত্রুটিপূর্ণ’। এ রায়কে কেন্দ্র করে গতকাল আদালত চত্বরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। আদালতের বাইরে মোতায়েন করা হয় দাঙ্গা পুলিশ।
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা বিরোধী দলগুলোর অনাস্থা প্রস্তাব ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে ৩ এপ্রিল খারিজ করে দেন পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার। এর পরপরই প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে পার্লামেন্ট ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট। এই পুরো প্রক্রিয়াকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন বিরোধীরা। অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্ট অনাস্থা প্রস্তাব খারিজের দিনই স্বতঃপ্রণোদিত (সুয়োমোটো) হয়ে নোটিস দেয়। সর্বোচ্চ আদালত তখন বলে, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর তারা নজর রাখছে।
পাকিস্তানে সংবিধান অনুযায়ী পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা। বিরোধীরা ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সদস্য ডেপুটি স্পিকার সুরির সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান।