নতুন করে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে চীনের সবচেয়ে জনবহুল শহর সাংহাইয়ে। এ জন্য নির্ধারিত সময়ের দু’দিন আগেই কর্তৃপক্ষ এ শহরের পশ্চিমাঞ্চলের কিছু এলাকায় লকডাউন দিয়েছে। ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া সত্ত্বেও সেখানে সংক্রমণ এক তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর দিয়েছে। এছাড়া পুরো চীনে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সাংহাইয়ের লোকসংখ্যা দুই কোটি ৬০ লাখের মতো। তৃতীয় দিনে চীনের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র সাংহাইয়ে হুয়াংহো নদী বরাবর কর্মকর্তারা কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছেন। এক অংশে রয়েছে নদীটির পূর্বাঞ্চলের অর্থনৈতিক জোন থেকে পশ্চিমে ঐতিহাসিক প্রাণকেন্দ্র পর্যন্ত।
অন্যদিকে শিল্প শহর পুডংয়ে চলছে গণহারে পরীক্ষা। পূর্বাঞ্চলের জনগণ সোমবার থেকে লকডাউনে রয়েছে। অন্যদিকে পশ্চিমাঞ্চলের জনসাধারণের চারদিনের লকডাউন শুরু হওয়ার কথা ছিল আগামী শুক্রবার থেকে। কিন্তু তার দু’দিন আগেই এই লকডাউন শুরু হয়েছে। সাংহাইয়ের মতো একটি বড় মেট্রোপলিসকে যদি আবার পূর্ণাঙ্গ লকডাউন দেয়া হয় তাতে জাতীয় প্রবৃদ্ধি শতকরা চারভাগ কমে যাবে বলে মনে করছেন চাইনিজ ইউনিভার্সিটি অব হংকং, সিংহুয়া ইউনিভার্সিটি ও অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থনীতিবিদরা। তারা এমন আভাস দিয়েছেন মধ্য মার্চে।
সাংহাইয়ে বুধবার লক্ষণহীন করোনায় আক্রান্ত রেকর্ড করা হয়েছে ৫৬৫৬ এবং লক্ষণযুক্ত সংক্রমণ রেকর্ড করা হয়েছে ৩২৬। মঙ্গলবারের তুলনায় এ সংখ্যা অনেক বেশি। মঙ্গলবার লক্ষণবিহীন সংক্রমণ হয়েছিল ৪৩৮১ জন। লক্ষণযুক্ত আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৯৬ জন। লক্ষণবিহীন করোনা আক্রান্তকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করছে চীন। এতে বলা হচ্ছে লক্ষণবিহীন সংক্রমণ বলা হবে তখন, যখন তা পরবর্তীতে লক্ষণযুক্ত সংক্রমণে পরিণত হয়।
পশ্চিমাঞ্চলে বসবাসকারীদের অনেকে মঙ্গলবার বলেছেন, হাউজিং কমিটি থেকে তাদেরকে নোটিশ দেয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, আগামী সাতদিন তারা বাসা থেকে বাইরে যেতে পারবেন না। একটি নোটিশে বলা হয়েছে, আমরা খুব শিগগিরই স্বাভাবিক জীবন শুরু করবো। কিন্তু পরবর্তী সময়ের জন্য আমরা সবাইকে করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে গৃহীত ব্যবস্থা ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করার অনুরোধ করছি। অনেকে একত্রিত হবেন না। চলাচল কমিয়ে ফেলুন।
পক্ষান্তরে শহরের দক্ষিণে মিনহাংয়ে বসবাস করেন কমপক্ষে ২৫ লাখ মানুষ। তারা বলেছে, আগামী ৫ই এপ্রিল পর্যন্ত তারা সব রকম পাবলিক বাস চলাচল স্থগিত রাখবে। বুধবার সাংহাই কর্তৃপক্ষ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, লকডাউন শুরু হয়েছে সোমবার। এরই মধ্যে তারা ৯১ লাখ নিউক্লিক এসিড টেস্ট করেছেন। আরও বলা হয়েছে, তারা বিভিন্ন স্থান, যেমন সরকারি ভবন, নির্মাণ স্থাপনা, সামুদ্রিক পণ্যের মার্কেট এবং স্কুলে এক মাস ধরে জীবাণুনাশক কর্মকা- শুরু করেছে।
এরই মধ্যে পুডংয়ের ব্যবসায়িক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে বিঘিœত হচ্ছে। শহরে অটো নির্মাণ স্থাপনায় প্রভাব লেগেছে লকডাউনে। তেসলার সঙ্গে যোগ দিয়েছে আপটিভ এবং থিসেনক্রুপ। তারা তাদের কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে করোনার কারণে গৃহীত পদক্ষেপের কারণে। সাংহাই সরকার বলেছে, তাদের অফিসিয়াল উইচ্যাট একাউন্টে মঙ্গলবার দিনের শেষের দিকে বলেছেÑ যারা নিউক্লিক এসিড টেস্ট পরীক্ষা করাতে অস্বীকৃতি জানাবে, তাদেরকে দায় বহন করতে হবে।
চীনের মূল ভূখন্ডে দু’সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন নতুন করে স্থানীয় পর্যায়ে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বছরের প্রথম দুই মাসে যে হারে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছিল, তার চেয়ে বেশি হারে এখন সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে।