পাকিস্তানের সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হওয়া ইমরান খান ইসলামাবাদে ‘ঐতিহাসিক’ জনসমাবেশে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, ‘আমাকে যদি পদত্যাগও করতে হয়, তারপরও দেশের দুর্নীতিবাজ নেতাদের ছাড় দেব না।’
রোববার ইসলামাবাদের প্যারেড গ্রাউন্ডে তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) লক্ষাধিক কর্মী-সমর্থকের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে এই হুঙ্কার দিয়েছেন তিনি। ভাষণের শুরুতে ইমরান খান বলেন, `প্রথমে আমি দেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানাই। আমার আহ্বানে সাড়া দিয়ে আপনারা দেশের প্রত্যেক প্রান্ত থেকে যেভাবে সমাগত হয়েছেন, সেজন্য আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।’
`আমি আমার সংসদ সদস্যদেরও শ্রদ্ধা জানাই। কারণ তাদের অর্থের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল এবং ঘুষ দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তারা আমাকে খুশি করেছেন এবং আমি তাদের জন্য গর্বিত।’
ইমরান খান বলেন, “আমি আমার হৃদয়ের কথা বলতে চাই এবং আমি চাই আপনারা আমার কথা শান্তভাবে শুনুন। আমি আপনাদের `আমর বিল মারুফের’ জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম যে, আমাদের পাকিস্তান ইসলামি কল্যাণ রাষ্ট্রের আদর্শে গড়ে তোলা হয়েছিল। রিয়াসাতে মদিনার ভিত্তিতে দেশ গড়তে হবে।”
তিনি বলেন, ‘আমরা আবাসন, কারিগরি শিক্ষা এবং ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য পরিবারগুলোকে ঋণ দিচ্ছি। শুল্ক বাড়ানোর সাথে সাথে আমি ভর্তুকি এবং পেট্রোলের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছিলাম। বিদ্যুতের দামেও ভর্তুকি দিয়েছি। আমি জনগণের জন্য আরও অর্থ ব্যয়ের ঘোষণা দিয়েছি। কারণ আমাদের সরকার করের ক্ষেত্রে আরও মূলধন সংগ্রহ করবে।
পাকিস্তানের এই প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার যুদ্ধকে মহানবী (সা.)-এর শিক্ষা বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আমাদের নবীও (সা.) আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিয়েছিলেন। আমি দুর্নীতিবাজদের ছাড় দেব না। কারণ আমার নবী ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, গরিবদের শাস্তি দিলে এবং ধনীদের ছাড় দিলে জাতি ধ্বংস হয়ে যায়।
দুর্নীতিবাজদের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘যাই ঘটুক না কেন, আমি তাদের ছাড় দেব না। এমনকি আমার সরকার চলে গেলেও অথবা আমি প্রাণ হারালেও তাদের ক্ষমা করবো না।’
আজকের এই সমাবেশের নাম কেন আমর বিল মারুফ করা হয়েছে, তার ব্যাখ্যায় ইমরান খান বলেন, আমর বিল মারুফের অর্থ হচ্ছে, কোনো জাতি মন্দের বিরুদ্ধে জিহাদ এবং ভালোকে সমর্থন করতে বাধ্য। ইরাক যুদ্ধের সময় ব্রিটেনে ২০ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমেছিল। এটা ছিল আমর বিল মারুফ।
সমাবেশস্থলে উপস্থিত জনগণের উদ্দেশ্যে পাক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আপনাদের এখানে ডেকেছি, কারণ জনগণকে ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। পাকিস্তান ধ্বংস হচ্ছে দাবি করে তারা আমাদের সরকার ক্ষমতাচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে আমি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলতে চাই, গত সাড়ে তিন বছরে আমাদের সরকারের মতো পাকিস্তানের কোনো সরকারই কাজ করতে পারেনি।’
দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে। গত ০৮ মার্চ রাজধানী ইসলামাবাদে বিরোধী দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি ও মুসলিম লীগের (নওয়াজ) নেতৃত্বে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের আবেদন করে। সেই সময় দেশটির বিরোধীরা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে দাবি তোলেন—‘হয় পদত্যাগ করুন, নয়তো অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হোন।’
শুক্রবার জাতীয় পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনের তারিখ ছিল। কিন্তু শুক্রবারের অধিবেশনে সম্প্রতি জাতীয় পরিষদের মারা যাওয়া সদস্য খায়াল জামান, সাবেক প্রেসিডেন্ট রফিক তারার ও উচ্চকক্ষ সিনেটের সদস্য রেহমান মালিকের বিদেহী আত্মার প্রার্থনা করা হয়। পরে আগামীকাল সোমবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত জাতীয় পরিষদের অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করেন স্পিকার আসাদ কায়সার।
এর আগে, গত বছরের মার্চে বিরোধীদের দাবিতে প্রথমবারের মতো অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হয়েছিলেন ইমরান খান। তবে সেই সময় অল্প ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়ে বিপদ উৎরে যান ক্রিকেট তারকা থেকে প্রধানমন্ত্রীর মসনদে আসীন ইমরান। পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে আয়োজিত সেই আস্থা ভোটে জয়ের জন্য ইমরানের ১৭২টি ভোটের প্রয়োজন হলেও তিনি পেয়েছিলেন ১৭৬ ভোট।