ইউক্রেনে নিষিদ্ধ ফসফরাস বোমা ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর জরুরি সম্মেলনে যুক্ত হয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, আজ সকালেই ফসফরাস বোমা ব্যবহার করেছে রুশ বাহিনী। তার কথায় , ‘এতে আবার শিশুরা মরছে, লোকজন মারা যাচ্ছে।’ তবে এই অস্ত্র কোথায় ব্যবহার করা হয়েছে তার প্রমাণ দেননি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। খবর বিবিসির।
১৯৭৭ সালের জেনেভা কনভেনশনে যুদ্ধক্ষেত্রে ফসফরাস বোমার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার কারণ এটি অন্যান্য বোমার চেয়ে মারাত্মক। এই বোমা যেখানে ছোড়া হয় সেখানে আগুন ধরে যায় এবং সেই আগুন অনেকটা জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপর থেকেই পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
রাশিয়ার সামরিক অভিযানের এক মাস পূর্তির দিন বৃহস্পতিবার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে জরুরি সম্মেলনে বসেছেন ন্যাটোর নেতারা। সেই সম্মেলনে অংশ নিয়ে জেলেনস্কি ন্যাটোর নেতাদের প্রতি কিয়েভে সামরিক সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানান।
এই সময় ইউক্রেনের আকাশকে আবারও ‘নো-ফ্লাই জোন’ ঘোষণা করার আহ্বান জানান জেলেনস্কি। বলেন, ইউক্রেনের কোনো শক্তিশালী বিমান বিধ্বংসী প্রতিরক্ষা নেই। এ কারণেই আমরা এই সহযোগিতা চাচ্ছি।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘রাশিয়া গণবিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহার করছে। আমরা শুরু থেকেই ইউক্রেনের জনগণ এবং শহরগুলোকে বাঁচাতে সামরিক সহায়তার আহ্বান জানিয়ে আসছি। কিন্তু ইউক্রেন এখন পর্যন্ত একটি বিমানও পায়নি।’
জেলেনস্কি বলেন, ‘ট্যাঙ্কের জন্য যে আবেদন করছি, সেগুলো আমাদের দিন, আমাদের কাছে বিক্রি করুন। কিন্তু ন্যাটো সদস্যদের কাছ থেকে এখনও এ বিষয়ে স্পষ্ট উত্তর পাওয়া যায়নি।’
পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য কয়েক বছর আগে আবেদন করে ইউক্রেন। মূলত এ নিয়েই রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এর মধ্যে ন্যাটো ইউক্রেনকে পূর্ণ সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে মনোনীত করায় দ্বন্দ্বের তীব্রতা আরও বাড়ে।
ন্যাটোর সদস্যপদের আবেদন প্রত্যাহারে চাপ প্রয়োগ করতে যুদ্ধ শুরুর দুই মাস আগ থেকেই ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় দুই লাখ সেনা মোতায়েন রাখে মস্কো।
কিন্তু এই কৌশল কোনো কাজে না আসায় গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দোনেস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া।
ঠিক তার দুদিন পর ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। এরপর রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে।
এদিকে চলমান এই যুদ্ধে ইতোমধ্যে ইউক্রেন ছেড়েছেন প্রায় ৩৯ লাখ মানুষ। যুদ্ধে ইউক্রেনের ১৩শ’ সেনা নিহত এবং রাশিয়ার ১৫ হাজার ৮০০ সৈন্য নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন।
তবে রাশিয়া বলছে, যুদ্ধে তাদের প্রায় ৫০০ সৈন্য নিহত এবং ইউক্রেনের আড়াই হাজারের বেশি সেনা নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘ জানিয়েছে, রুশ অভিযানে ইউক্রেনে ৯২৫ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।