করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় মানবিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে খাদ্য বিতরণ শুরু করেছিল সরকার। করোনা মহামারি চলাকালীন স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩-এর মাধ্যমে এ কার্যক্রম পরিচালিত হতো। তবে করোনার সংক্রমণ কমে আসলেও থেমে নেই জরুরি খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম। এখনো খাবার চেয়ে প্রতিনিয়ত ফোন আসছে ৩৩৩ নম্বরে। গত তিন মাসে প্রতিদিন গড়ে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ খাবার চেয়ে ৩৩৩ নম্বরে কল দিয়েছেন। করোনাকালীন সময়ে এই কলের সংখ্যা ছিল দৈনিক প্রায় ২০ হাজারের মতো। এই চাহিদার বিপরীতে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে গড়ে প্রায় ৫০০ থেকে হাজার পরিবারকে। একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্প এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
খাদ্য সহায়তা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, এখন যারা খাদ্য সহায়তা নিচ্ছেন তাদের একটি বড় অংশ মূলত করোনার কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। আবার কেউ কেউ স্বল্প আয়ের মানুষ। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে তারা সংসার চালাতে পারছেন না। ফলে ৩৩৩-এর দ্বারস্থ হচ্ছেন তারা। করোনা মহামারি মোকাবিলা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ এর মাধ্যমে খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে সরকার। এই সহায়তা পেতে বেশ কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হয়। করোনা মোকাবিলা ও জরুরি খাদ্যসহ অন্যসব সেবার জন্য প্রথমে ‘৩৩৩’ গিয়ে ‘৩’ চাপতে হয়। এসময় আইভিআর (কম্পিউটার ভয়েজ রেকর্ড) থেকে চারটি বিষয় জানতে চাওয়া হয়। যেমন- ফোন করা ব্যক্তি বা তার পরিবারের কোনো সদস্য সরকারি ত্রাণ বা ভাতা, ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ) বা ১০ টাকা কেজি দরে চাল পেয়েছেন কিনা? পরিবারের সদস্য সংখ্যা তিনজনের অধিক কিনা? মাসিক আয় ৫ হাজার টাকার বেশি কিনা? পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তি কিনা? এসব প্রশ্নের কাঙ্ক্ষিত জবাব মিললেই শুধু ওই ব্যক্তির কল একজন প্রতিনিধির কাছে ট্রান্সফার করা হয়। কাঙ্ক্ষিত জবাব না মিললে কল রেকর্ডে থাকলেও তা ত্রাণের কল বলে গণ্য হয় না। এটুআইয়ের ওয়েবসাইটের দেয়া তথ্য মতে, গত ২২শে ডিসেম্বর খাদ্য সহায়তা চেয়ে ৩৩৩ নম্বরে কল এসেছিল ২ হাজার ৪১৭টি। এর বিপরীতে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে ১ হাজার ২৩৩টি পরিবারকে। ২০২২ সালের ২৬শে জানুয়ারি ২ হাজার ৯৪৬টি কলের বিপরীতে খাদ্য সরবরাহ করা হয়েছে ১ হাজার ২৬৪টি পরিবারকে। গত ১২ই মার্চ খাদ্য সহায়তা চেয়ে ৩৩৩ নম্বরে কল এসেছে ১ হাজার ৭২৩টি। আর খাবার পৌঁছে দেয়া হয়েছে ৬৭৭টি পরিবারকে। খাদ্য সহায়তা প্রদানের আগে স্থানীয় প্রশাসন কিংবা জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সহায়তা গ্রহণকারীদের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার পর্যন্ত ৩৩৩ নম্বরের মাধ্যমে ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯৬৮টি পরিবারের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এতে মোট উপকারভোগী ছিলেন প্রায় ১৭ লাখেরও বেশি মানুষ। গত তিন মাসে প্রায় ৫ হাজার পরিবার এই সুবিধা ভোগ করেছে। করোনা মহামারি মোকাবিলায় ৩৩৩ নম্বরের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তার জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছিল ত্রাণ মন্ত্রণালয়। দুর্যোগ অধিদপ্তর ও মাঠ প্রশাসনের সহায়তায় এ ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। সরকারের বিতরণকৃত খাবারের মধ্যে রয়েছে, চাল, মসুর ডাল, আয়োডিনযুক্ত লবণ, চিনি, চিড়া, সয়াবিন তেল ও নুডলস। এ ছাড়া নগদ অর্থ, ত্রাণের চাল, ভিজিএফ (চাল), শিশুখাদ্য ও গো-খাদ্য সহায়তাও বিতরণ করেছে ত্রাণ মন্ত্রণালয়।