আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র একসাথে যায় না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র এই দুটি কখনো একসাথে যায় না, এ কথাটি পরীক্ষিত।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা দেখছি অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে একটি কতৃত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। একইসাথে একটি ছদ্মবেশী বাকশাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তার ওপরে গণতন্ত্রের মোড়ক লাগানো হয়েছে। একটি নির্বাচন হয়, সেখানে তারা তাদের মত নির্বাচন সাজিয়ে দেখায় তারা নির্বাচিত প্রতিনিধি। আর সেইভাবেই তারা তাদের ক্ষমতাকে মিথ্যার মধ্য দিয়ে পাকাপোক্ত করে চলেছে।’
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)-এর বার্ষিক কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের যে লক্ষ্য ছিল তার অন্যতম হচ্ছে স্বাধীন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা করা। আমরা জানি গণতন্ত্র ও স্বাধীন গণমাধ্যম একে অপরের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। দুর্ভাগ্য আমাদের জাতি বারবার সেই জায়গাটি আক্রান্ত হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় যে, গণতন্ত্র ও স্বাধীন গণমাধ্যমের সবচেয়ে বেশি যারা ক্ষতি করেছে সেই দলটি হলো আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র এই দুটি কখনো একসাথে যায় না, এ কথাটি পরীক্ষিত।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যখনি যেকোনো উপায়ে ক্ষমতা দখল করে তাদের প্রধান লক্ষ্য থাকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে ধ্বংস করা। আমরা ১৯৭২-৭৫ এর ইতিহাস জানি। কিভাবে সকল সংবাদমাধ্যমগুলোকে নিষিদ্ধ করে দিয়ে একদলীয় বাকশাল কায়েম করা হয়েছিল। আমরা পরবর্তীকালে দেখেছি যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে গণমাধ্যমের উপর আক্রমণ করেছে। গত এক যুগ ধরে এই আওয়ামী লীগের প্রধান টার্গেট হচ্ছে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ। গণমাধ্যমকে আক্রমণ করে তাদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সত্য যে কথা বলা তাকে সম্পূর্ণভাবে নির্বাসিত করা।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ গত ১২ বছরে আওয়ামী শাসনামলে এমন একটি পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে সত্যিকার অর্থে রাষ্ট্র বলতে আর কিছু নেই। আমরা রাষ্ট্র বলতে যে জিনিসগুলো বুঝি বিশেষ করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, যেখানে মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা থাকবে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে, ভিন্নমত পোষণের স্বাধীনতা থাকবে, সেগুলো একেবারেই ধ্বংস হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের বিচার হবে, সেই বিচার হবে সংবিধান ধ্বংস করার জন্য। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তারা পুরোপুরি তিনটি অনুচ্ছেদ তারা পরিবর্তন করেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে কোথায় এভাবে সংবিধান পরিবর্তন করা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। আজকে যেসকল আইন করা হচ্ছে বিশেষ করে সংবাদমাধ্যম নীতিমালার কথা যেটা বলা হচ্ছে, সেই প্রতিটি আইন হচ্ছে সংবাদ মাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য।
এসময় তিনি আরো বলেন, আমাদের সমাজে একটা স্থায়ী ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। সেই ক্ষতটা হচ্ছে বিভাজন। এই সাংবাদিক ইউনিয়নে দুই ভাগ, সংবাদ কর্মীরা দুই ভাগ। অর্থাৎ একটা জায়গায় কেউ নাই। ফলে সার্বজনীন যে বিষয়টা তা এখন আর নেই।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)-এর সভাপতি এম আব্দুল্লাহর সভাপতিত্বে ও মহাসচিব নূরুল আমিন রুকনের সঞ্চলনায় এসময় আরো বক্তব্য রাখেন, ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ, কামাল উদ্দিন সবুজ, আব্দুল আজিজ, কাদের গণি চৌধুরী, ইলিয়াস খান, কবি আবদুল হাই শিকদার, বাকের, শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।