প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটি মহল ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে নারীদের গৃহবন্দি করে রাখতে চায়। দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক হচ্ছে নারী। এই নারীদের বাদ দিয়ে দেশের সুষম উন্নয়ন সম্ভব নয়। গতকাল নারী দিবসের আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের নারী উন্নয়নমুখী নীতির কারণে এখন প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, জাতীয় সংসদের উপনেতা, বিরোধীদলীয় নেতা, অনেক বিচারক, সচিব ও ভিসি হচ্ছেন নারী। সরকার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৩টি সংরক্ষিত আসন সৃষ্টির মাধ্যমে পল্লী অঞ্চলে নারী নেতৃত্ব বিকাশে ফলপ্রসূ কর্মসূচি নিয়েছে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি।
এই মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিক-উল-ইসলাম ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ আর্জেন্টিনা মেতাভেল পিককিন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন তার রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ চরিতার্থের জন্য হরতাল-অবরোধ দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারছেন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে- পেট্রল ঢেলে, ককটেল মেরে দেশের মানুষকে হত্যার অধিকার তাকে কে দিয়েছে? বেগম জিয়া দাবি করেন যে, তিনি তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা কিভাবে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করতে পারেন? রাজনীতি হচ্ছে মানুষের জন্য ও তাদের কল্যাণের জন্য- রাজনীতি মানুষ পুড়িয়ে হত্যার জন্য নয়। এজন্য তিনি এ ধরনের নৃশংসতার প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে নারী সমাজসহ দেশের সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এটা কোনভাবেই সহ্য করা যায় না। খালেদা জিয়াকে তার নির্মম ও নৃশংস কর্মকাণ্ডের শাস্তি পেতেই হবে। তথাকথিত আন্দোলনের নামে হরতাল ও অবরোধ ডাকার জন্য বেগম খালেদা জিয়ার তীব্র সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন এখন সরকারেও নেই, সংসদেও নেই। তিনি তার ভুল সিদ্ধান্তের জন্য এখন কোথাও নেই। নারী বিরোধী প্রচারণা বন্ধে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি নারী-পুুরুষ নির্বিশেষ সকলকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক হচ্ছে নারী। এজন্য নারী-পুরুষ সম্মিলিতভাবে সকল বাধা পেরিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। স্বাধীনতার পর নারী সমাজের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন উদ্যোগের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ’৭২-এর সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধে পুরুষের পাশাপাশি অংশগ্রহণকারী নারীর অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ যখনই সরকারে আসে নারীদের কল্যাণে কাজ করে। এ ছাড়া জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ প্রণয়নসহ নারী সমাজের উন্নয়নে বিগত ৬ বছরে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সাউথ-সাউথ পুরস্কার ও নারী স্বাক্ষরতায় ইউনেস্কো ‘শান্তি বৃক্ষ’ পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার অর্জনের কথা উল্লেখ করে বলেন, জাতিসংঘসহ অনেক দেশ ও সংস্থা নারী সমাজের উন্নয়নে বাংলাদেশের নিরলস প্রচেষ্টার ভূয়সী প্রশংসা করেছে। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বিপুল ভোটে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন, যা বাংলাদেশের জন্য এক বিরল সম্মান। তিনি বলেন, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা এবং বাংলাদেশের নারীদের কর্মস্পৃহা, দক্ষতা ও ত্যাগের ফলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের নারীর অবস্থান সুদৃঢ় হয়েছে।