বাংলাদেশে সাক্ষ্যপ্রমাণ আইনে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ বিচারের ক্ষেত্রে অভিযোগকারী নারীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা এবং দুশ্চরিত্র প্রমাণের যে আইনি সুযোগ এতদিন ছিল, সে সংক্রান্ত দুটি ধারা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সোমবার এ বিষয়ক আইন এভিডেন্স অ্যাক্ট ২০২২-এর সংশোধনীর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ।
এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, `ধর্ষণের মামলায় যে ভিকটিম, তাকে অনৈতিক চরিত্র, ইমমরাল ক্যারেক্টার সম্পর্কে প্রশ্ন করা যাবে, আইনে এটা ছিল। এটাকে আমরা বাতিল করে দিচ্ছি। এভিডেন্স অ্যাক্ট-এর ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন আসা মানেই হচ্ছে কোন ধর্ষণ মামলায় যে ভিকটিম তাকে তার চরিত্র সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন করা যাবে না।’
তিনি জানিয়েছেন, জেরা করার সময় শালীনতা বজায় রেখে প্রশ্ন করার ব্যাপারে আদালত ধর্ষণে অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং তার আইনজীবীকে নির্দেশনা দিতে পারবে।
বাংলাদেশে বহুদিন যাবত নারী অধিকার কর্মীরা এই ধারাটি বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
`এই বিষয়টা কোর্টের এখতিয়ারের উপরে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এরকম একটা প্রস্তাব করা হয়েছে যে জেরা করার সময় আদালত শালীনতা বজায় রাখার জন্য যে আসামি তার আইনজীবীকে, বা আসামি নিজে যদি জেরা করে তাহলে আদালত অবশ্যই এই জিনিসটা নিশ্চিত করবে যে শালীনতা বজায় রেখে ভিকটিমকে প্রশ্ন করতে হবে।’
বাংলাদেশে বহুদিন যাবত মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীরা এই ধারাটি বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
সম্প্রতি ঢাকার রেইনট্রি হোটেলে দু’জন তরুণীকে ধর্ষণের আলোচিত মামলায় সব কজন অভিযুক্ত খালাস পাওয়ার পর নারী অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীরা বিতর্কিত ধারাটি বাতিলের দাবি আবারো সামনে এনেছেন।
এই রায়ের পর ধারা দুটি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে কয়েকটি সংগঠন মামলাও করেছিল।
আইনটির দুটি ধারায় আইনগতভাবেই ধর্ষণের ঘটনার বিচারের ক্ষেত্রে অভিযোগকারী নারীকেই দুশ্চরিত্র প্রমাণের যে সুযোগ রয়েছে তাতে প্রায়শই দোষী ব্যক্তি ছাড় পেয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক নিনা গোস্বামী।
তিনি বলছিলেন, `দোষ ধরার জন্য সেগুলো আগে খুঁজে বের করার একটা চেষ্টা থাকে। অভিযোগ সম্পর্কে সন্দেহ তৈরি করার জন্য। তদন্তকালীন সময়েও চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। আবার যখন আদালতে জেরার সময় চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন করে জর্জরিত করে ফেলা হয়। আইনে সুযোগ থাকার কারণে এমনভাবে বলা হয় যে সে ভালো না। বলা হয় তার স্বভাব চরিত্র এইরকম। এতে যিনি অভিযুক্ত বেনেফিট তার দিকে চলে যায়।’
এমন অভিজ্ঞতার কারণে বাংলাদেশে ধর্ষণের শিকার নারীরা প্রায়শই বিচার চাওয়া থেকে বিরত থাকেন। নিনা গোস্বামী ধারা দুটি বাতিলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলছেন, তদন্তের সময়েও এসব প্রশ্নের মাধ্যমে পুলিশের কাছে অভিযোগকারীকে পাল্টা হেনস্থার শিকার হতে হয়।
ধারা দুটি বাতিল হলে এটি তদন্তকারীদের উপরেও বর্তাবে।
সূত্র : বিবিসি