চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট আড়াল করতে সরকার জঙ্গিবাদের জিকির তুলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ। বলেছেন, একটি প্রহসনমূলক নির্বাচনের ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক সঙ্কটকে জঙ্গিবাদের সমস্যা হিসেবে বাজারজাত করার ভাঙা ক্যাসেটটি আওয়ামী লীগ বাজিয়েই যাচ্ছে। সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে বিএনপি ও ২০ দল ঐতিহাসিকভাবে সঠিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আওয়ামী লীগের ভুয়া নির্বাচনের ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক মহাদুর্যোগের দায় দেশের জনগণ নিবে না। সেই ভুলের খেসারত আওয়ামী লীগকেই দিতে হবে। এখন রাজনৈতিক সঙ্কটকে আড়াল করতেই আওয়ামী লীগ জঙ্গিবাদের জিকির তুলে দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক মহলকে বিভ্রান্ত করতে চায়। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন। সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দণ্ড প্রকাশ্যেই ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আইন-আদালত, বিচার ব্যবস্থার কোন কার্যকারিতা এরপরে আর অবশিষ্ট থাকে না। প্রধানমন্ত্রীর নিজের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ১৩টিরও অধিক মামলায় তাকে কোনদিন হাজিরাও দিতে হয়নি, মোকাবেলাও করতে হয়নি। নিয়ন্ত্রিত বিচার ব্যবস্থার কল্যাণে তাকে সকল মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত হাজার হাজার মামলা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। আওয়ামী মন্ত্রী-এমপি’দের বিরুদ্ধে দুদকের আওতাধীন সকল অভিযোগ ও মামলায় দায়মুক্তি সনদ প্রদানের হিড়িক পড়েছে। মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগও শেষ পর্যন্ত আমলে নেয়া হয়নি। হলফনামার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের স্বঘোষিত দুর্নীতির খতিয়ান দেশের জনগণ ও সারাবিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছেন। অথচ তাদেরকেও পুতপবিত্র চরিত্রসনদ প্রদান করেছে দুদক সরকারি প্রভাবে। বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, শাসন বিভাগ নিয়ন্ত্রিত বিচার ব্যবস্থায় আইনের শাসন কামনা করা যায় না। বিচার বিভাগে নগ্ন হস্তক্ষেপের ফলে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের ন্যায়বিচার প্রত্যাশা তিরোহিত হয়েছে অনেক আগেই। তারপরেও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা আইনিভাবেই মোকাবেলা করা হবে। গ্রেপ্তার-নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, সম্প্রতি দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে বিএনপি নেতাকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে পুলিশ তার পুত্র রেজওয়ানুলকে গুলি করে হত্যা করে। স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে গুলিবিদ্ধ করে। ফেনীতে ছাত্রদল নেতা আরিফকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে তার বৃদ্ধ পিতা মফিজুর রহমানকে পিটিয়ে হত্যা করে যৌথবাহিনী। এজাতীয় অসংখ্য হত্যাকাণ্ডের প্রত্যেক ঘটনায় উল্টো পুলিশ নিহতদের বিরুদ্ধেই মামলা দায়ের করেছে। তিনি অভিযোগ করেন, কোন অভিযোগ ছাড়াই গতরাতে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকনকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে বাসা থেকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে হাজির না করায় তার পরিবারসহ আমরা গভীরভাবে আতঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন। খোকনের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে তাকে আদালতে উপস্থাপনের দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি আানিসুর রহমান তালুকদার খোকনকে গ্রেপ্তারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আন্দোলনকারী জনগণের লাশের স্তূপ মাড়িয়ে সারা দেশে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার প্রাণান্তকর কুৎসিত অপচেষ্টায় বাংলাদেশ এখন মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। ভয়ঙ্কর এই পুলিশি রাষ্ট্রে জনগণ আইন-আদালতের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। গণতন্ত্রের শরীরে এত রক্তপাত জনগণ ইতিপূর্বে কখনও প্রত্যক্ষ করেনি। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, যুক্তির বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ কখনোই শুভ ফল বয়ে আনবে না। র্যাব, পুলিশ, বিজিবিকে রক্ষীবাহিনী স্টাইলে গণহত্যার হুকুম দিয়ে তার দায়ভার প্রধানমন্ত্রী নিজের কাঁধে তুলে নিলেও এরজন্য দায়ী কেউই বিচারের হাত থেকে রেহাই পাবে না। স্বৈরতান্ত্রিকতা, একনায়কতান্ত্রিকতা পরিত্যাগ করে গণতন্ত্রের পথে আসুন। দেশকে বাঁচান, মানুষ বাঁচান এবং নিজেরাও বাঁচার চেষ্টা করুন।