গ্রাম বাংলা ডেস্ক: পেনাল্টি শটে গোল করার পর নেইমার এভাবেই অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেন। তার দল ট্রাইবেকারে ৩-২ গোলে জয়ী হয় : এএফপি
ফুটবলে ব্রাজিল রীতিমতো আতঙ্ক চিলির। আর ম্যাচ বিশ্বকাপের হলে তো কথায় নেই! হার যেন নিয়তিই চিলির! নিজ দেশের বিশ্বকাপেও তারা পিষ্ট হয়েছে ব্রাজিলের জাঁতাকলে। এবং ওই ১৯৬২ সালের ভাগ্যতেই এখনো আটক চিলি। ১৯৯৮ ও ২০১০ সালে দলটির বিশ্বকাপ স্বপ্ন জমাট বাঁধার আগেই ব্রাজিল ভেঙে দেয়। গতকাল আবারো পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নেরা চিলির বিশ্বকাপ ‘দুঃখ’ হিসেবে উদ্ভাসিত হলো। বেলো হরিজন্তে নাটকীয়তায় ভরপুর শেষ ষোলোর ম্যাচে স্বাগতিক ব্রাজিল টাইব্রেকারে ৩-২ গোলে চিলিকে হারিয়ে প্রথম দল হিসেবে উঠল টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালে।
নির্ধারিত সময় ১-১ গোলে ড্রয়ের পর অতিরিক্ত সময়েও গোল করতে পারেনি কোনো দল। ফলে টাইব্রেকার অপরিহার্য হয়ে পড়ল ফলাফল নির্ধারণে। এবং ভাগ্য পরীক্ষায় এই খেলায় ব্রাজিল জিতল গোলরক্ষক জুলিও সিজারের অসাধারণ নৈপুণ্যে। অভিজ্ঞ গোলরক্ষক চিলির পিনিলা ও সানচেজের নেয়া পেনাল্টি ঠেকিয়ে দিয়ে জাতীয় বীরে পরিণত হলেন। তবে উইলিয়ান ও হাল্ক গোল করতে না পারায় চিলিও ম্যাচে ফিরে এলো। কিন্তু দলটি ভাগ্যকে বিন্দুমাত্র পাশে পায়নি! তাদের পক্ষে জারার নেয়া সর্বশেষ শট প্রতিহত হলো ডান পাশের বারে লেগে। ততক্ষণে চারি দিকে উৎসবের ঢেউ উঠল। হলুদ রঙের জার্সি পরে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করা দর্শকেরা মেতে ওঠেন বাঁধভাঙা উন্মাদনায়। ওই দিকে কন্নায় ভেঙে পড়েন চিলির ফুটবলাররা। এবারো তাদের বিশ্বকাপ শেষ হলো ব্রাজিলের বাধায়। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো তারা হারল পেলের দেশের কাছে। এর মধ্যে শেষ তিনবার ব্রাজিলের কাছে হেরেই দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই বিদায় হলো চিলির। ভাগ্যও যেন তাদের হারকেই আপন করে নিয়েছে! তা না হলে অতিরিক্ত সময়ের একেবারে অন্তিম মুহূর্তে সানচেজের নেয়া দুর্দান্ত শট কেনই বা ক্রসবারে লেগে প্রতিহত হবে?
চিলির বিপক্ষে একাদশে পরিবর্তনের ইঙ্গিত আগেই দেন ব্রাজিলের কোচ লুই ফিলিপ সোলারি। বাস্তবে একাদশে পরিবর্তন আনেন তিনি নকআউটের ম্যাচে। পাওলিনহোর পরির্বতে একাদশে অন্তর্ভুক্ত করেন ফার্নানদিনহোকে। যদিও দলটির খেলার মানে তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। দেখা যায়নি ব্রাজিলীয় গৌরব সাম্বা নৃত্যের ফুটবল। ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে এসেই গোল করার দু-একটি সুযোগ তৈরি ছাড়া কিছুই করতে পারেনি সোলারির শিষ্যরা। একমাত্র নেইমারই পরীক্ষা নিতে সক্ষম হন চিলির গোলরক্ষক ব্র্যাভোর। অতিরিক্ত সময়েও কোনো ম্যাজিক দেখাতে ব্যর্থ হয় ব্রাজিল।
ম্যাচের শুরুতেই ইঙ্গিত মিলল রাফ অ্যান্ড টাফ ফুটবলের। মারাত্মক সব ট্যাকল করায় কেউ কম গেল না। নেইমারের ওপরও চড়াও হন চিলির রক্ষণভাগের ফুটবলাররা। ব্রাজিলের রক্ষণভাগও ছেড়ে কথা বলেনি। ভারগাস, সানচেজ ও ভিদাল কড়া ট্যাকেলের শিকার হন। দুই দলের ফুটবলারদের নাছোড়বান্দা মনোভবের ম্যাচে গতিময়তারও কোনো অভাব হয়নি। মুহুর্মুহু আক্রমণেও গেল দল দু’টি।
তবে সাফল্য প্রথমে ব্রাজিলই পেল। একেবারেই অপ্রত্যাশিত গোল। ১৮ মিনিটে নেইমারের নেয়া কর্নার থেকে গোল করেন চেলসি ডিফেন্ডার ডেভিড লুইজ। ব্রাজিল, ব্রাজিল চিৎকারে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো স্টেডিয়াম! যদিও তাদের উন্মাদনা বেশিক্ষণ থাকেনি। চিলির সুপারস্টার সানচেজ মাটি করে দেন ব্রাজিলিয়ানদের আনন্দ। রক্ষণভাগের ভুলে গোল হজম করে স্বাগতিকেরা। চিলির আক্রমণভাগের ফুটবলার ভারগাস ব্রাজিলের সীমানা থেকে বল সংগ্রহ করে ক্রস দেন ডি বক্সে। আগে থেকেই পজিশনে ছিলেন বার্সেলোনা স্ট্রাইকার অ্যালেক্সিস সানচেজ। বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে চোখের পলকেই শট নেন। ব্রাজিলের গোলরক্ষক জুলিও সিজার ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েও বলের নাগাল পাননি। ততক্ষণে স্টেডিয়ামের একাংশে থাকা চিলির ভক্তরা উল্লাসে মেতে ওঠেন। এবারের বিশ্বকাপে সানচেজের এটি দ্বিতীয় গোল। প্রথমার্ধের বাকি সময়টা দুই দলই সাবধানী ফুটবল খেলে পার করে। যদিও কড়া ট্যাকল ঠিকই অব্যাহত থাকল। বল পজিশনে বিস্তর পিছিয়ে থাকা ব্রাজিল প্রথমার্ধেই ১৪টি ফাউল করে।