দলীয় ৪৫ রানে নেই দলের টপঅর্ডারের ৬ উইকেট, ঠিক সেখান থেকেই রেকর্ড জুটি গড়ে বাংলাদেশকে অবিশ্বাস্য জয় এনে দিলেন আফিফ হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজ। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে বিপর্যয়ে পড়েও এই জুটির অসাধারণ দৃঢ়তায় ৪ উইকেটে জিতে নেয় টাইগাররা।
সপ্তম উইকেট জুটিতে আফিফ-মিরাজ ১৭৪ রানে অপরাজিত থেকে দেশীয় রেকর্ড গড়েন। আগের রেকর্ডটি ছিল ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইমরুল কায়েস ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের ১২৭ রানের। যদিও সেবার বাংলাদেশ আগে ব্যাট করেছিল। তবে আর মাত্র ৩ রানের জন্য সপ্তম উইকেট জুটিতে বিশ্ব রেকর্ড হলো না। ২০১৫ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের জস বাটলার ও আদিল রশিদ ১৭৭ রান করে এই রেকর্ডের চূড়ায় রয়েছেন।
আফিফ ও মিরাজ ২২৫ বলে ১৭৪ রানের জুটি গড়েন। আফিফ ১১৫ বলে ১১টি চার ও একটি ছক্কায় ৯৩ রানের অপরাজিত থাকেন। অন্যপ্রান্তে মিরাজ ১২০ বলে ৯টি চারে ৮১ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন।
বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় দুদল। যেখানে প্রথমে ব্যাট করা আফগানিস্তান ৪৯.১ ওভারে ২১৫ রানে গুটিয়ে যায়। জবাব দিতে নেমে ৬ উইকেট হারিয়ে ও ৭ বল বাকি থাকতে ২১৯ করে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
এই ম্যাচে বাংলাদেশের জার্সিতে ওয়ানডে অভিষেক হয় মিডল অর্ডার ব্যাটার ইয়াসির আলী রাব্বির।
আফগানিস্তানের দেওয়া ২১৬ রানের লক্ষ্যে শুরুতেই মহা বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। প্রথম ওভারে ১২ রান আসলেও তৃতীয় ওভারের তৃতীয় ও পঞ্চম বলে দুই ওপেনারকে হারায় স্বাগতিকরা। প্রথমে ফজলহক ফারুকির তৃতীয় বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন লিটন দাশ (১)। এক বল পরেই ফারুকি এলবির ফাঁদে ফেলেন তামিম ইকবালকে (৮)।
ফারুকি নিজের পরের ওভারের প্রথম বলে ফের ঝলক দেখান। এবার তিনি ৩ রান করা মুশফিকুর রহিমকে বিদায় করে এলবির ফাঁদে ফেলে। আর একই ওভারের শেষ বলে অভিষিক্ত ইয়াসির আলী রাব্বিকে শূন্য রানে সরাসরি বোল্ড করেন।
কিছুটা থিতু হওয়ার চেষ্টা করা সাকিব আল হাসানও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ১৫ বলে ১০ করে তিনি মুজিব উর রহমানের বলে বোল্ড হন। ১২তম ওভারে বোলিংয়ে আসার রশিদ খান নিজের দ্বিতীয় বলেই মাহমুদউল্লাকে গুলবাদিন নাইবের ক্যাচ বানান। ১৭ বলে ৮ রান করেন তিনি।
এরপরই শুরু হয় আফিফ-মিরাজের মহাকাব্য। ক্যারিয়ারের অষ্টম ওয়ানডেতে এসে অভিষেক হাফসেঞ্চুরির দেখা পান আফিফ হোসেন। আর মিরাজ ওয়ানডের দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নেন। এই দুই তরুণের ব্যাটেই শেষ হাসি হাসে টাইগাররা।
এর আগে নিজেদের প্রিয় ফরম্যাট বলেই কি না, প্রায় ৭ মাস পর ওয়ানডে খেলতে নেমে দারুণ শুরু পায় বাংলাদেশ। বল হাতে দারুণ পারফর্ম করলেন মোস্তাফিজ-তাসকিন-শরিফুল-সাকিবরা। স্বাগতিকদের এমন বোলিং তোপের মুখে ২১৫ রান তুলতেই সব উইকেট হারালো আফগানিস্তান।
টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ১১ রানেই প্রথম উইকেট হারায় আফগানিস্তান। উইকেটে থিতু হওয়ার আগেই আফগান ওপেনার রহমতুল্লাহ গুরবাজকে বিদায় করেন মোস্তাফিজুর রহমান। এই বাঁহাতি পেসারের দ্বিতীয় ওভারে মিড উইকেটে তুলে মারতে গিয়ে তামিম ইকবালের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন গুরবাজ(৭)।
ষষ্ঠ ওভারে ডানহাতি পেসার তাসকিন আহমেদকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনের কাছে ক্যাচ তুলে দেন আফগানিস্তানের ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান। সেই ক্যাচটি তালুবন্দি করতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তবে গুরবাজ ইনিংস বড় করতে পারেননি। ১৯ রান করে এই ব্যাটার শরিফুলের বলে ইয়াসির আলী রাব্বির দারুণ এক ক্যাচে ফেরেন।
দলীয় ৫৬ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ফেলা আফগানিস্তানের রানের চাকা সচল রাখার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন রহমত শাহ। কিন্তু তিনে নামা এই ব্যাটারকে ইনিংস দীর্ঘ করতে দিলেন না তাসকিন আহমেদ। ডানহাতি এই টাইগার পেসারের বলে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরার আগে রহমত ৬৯ বলে ৩৪ রান করেন।
আফগান শিবিরে চতুর্থ ধাক্কা দেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। পার্ট-টাইম এই স্পিনার ম্যাচে প্রথমবার বল হাতে নিয়ে তুলে নেন হাশমতুল্লাহ শহীদির উইকেট। রিয়াদের স্পিনে বিভ্রান্ত হয়ে কট বিহাইন্ড হয়ে ফেরার আগে সফরকারী দলের অধিনায়ক ৪৩ বলে করেছেন ২৮ রান। এরপর নবি ও নজিবুল্লাহ মিলে গড়েন ৬৩ বলে ৬৩ রানের জুটি। ৩৯তম ওভারে নবিকে ২০ রানে বিদায় করে জুটি ভাঙেন তাসকিন।
নবি গেলেও বাংলাদেশের পথের কাঁটা হয়ে ছিলেন নজিবুল্লাহ। মাটি কামড়ে পড়ে থেকে ফিফটিও তুলে নেন এই আফগান ব্যাটার। তবে অন্যপ্রান্তে ছিল আসা-যাওয়ার মিছিল। এর মধ্যে সাকিবের এক ওভারে পড়ে ২ উইকেট। ইনিংসের ৪৫তম ও সাকিবের নবম ওভারের তৃতীয় বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন গুলবাদিন নাইব (১৭)। ওভারের শেষ বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন রশিদ খান (০)।
৪৬তম ওভারে মোস্তাফিজের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন মুজিব উর রহমান (০)। ৪৯তম ওভারে বোলিংয়ে এসে চতুর্থ বলে জাদরানকে বিদায় করেন শরিফুল। বাঁহাতি পেসারের বলে তুলে মারতে গিয়ে লং-অনে মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ তুলে দেন ৮৪ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৬৭ রান করেন জাদরান। শেষ ওভারে ফের মোস্তাফিজের আঘাত। এবার ইয়ামিন আহমাদজাইকে (৫) লং অনে রিয়াদের ক্যাচে পরিণত করেন ফিজ।
বল হাতে ৩টি উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজ। ২টি করে উইকেট গেছে শরিফুল, তাসকিন ও সাকিবের দখলে। বাকি উইকেট মাহমুদউল্লাহর। মিরাজ উইকেট না পেলেও ১০ ওভারে ৩ মেডেন দিয়ে মাত্র ২৮ রান খরচ করেন।
ব্যাটে-বলে দারুণ করে ম্যাচ সেরা হন মিরাজ।
একই ভেন্যুতে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে।