প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে উপযুক্ত ১০ জনের নামের তালিকা চূড়ান্ত করতে আজ বিকালে ফের বৈঠকে বসছে সার্চ কমিটি। ১২-১৩ জনের তালিকা থেকে আজকের বৈঠকেই ১০ নাম চূড়ান্ত করা হবে। এরপর ২৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন সার্চ কমিটির সদস্যরা। ওই সময়ই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি নিজেদের সুপারিশনামা তুলে দেবে রাষ্ট্রপতির হাতে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এদিকে চূড়ান্ত ১০ নামের তালিকা প্রকাশে বিশিষ্টজনরা পরামর্শ দিলেও তা অপ্রকাশিতই থাকছে। সার্চ কমিটির প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান গত রবিবার কমিটির বৈঠক শেষে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে না বলে জানিয়ে দেন। প্রস্তাব পাওয়া ৩২২ নামের মধ্য থেকেই ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করা হবে বলে সেদিন আভাস দিয়েছিলেন সার্চ কমিটির প্রধান। সার্চ কমিটি যে ১০ জনের নাম সুপারিশ করবে, সেখান থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইনে বলা হয়েছে, সার্চ কমিটি সিইসি পদের জন্য দুজন এবং নির্বাচন কমিশনারের চারটি পদের জন্য আটজনের নাম প্রস্তাব করবে রাষ্ট্রপতির কাছে।
ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠনে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন’ গত ২৭ জানুয়ারি সংসদে পাস করা হয়। পরে ৫ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে প্রধান করে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করে দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
এই সময়ের মধ্যে নিজেরা ছয়টি এবং বিশিষ্ট জনদের সঙ্গে চারটি বৈঠক করেছে সার্চ কমিটি। প্রথম দুই বৈঠকের পরই নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসহ সবার কাছে প্রস্তাব আহ্বান করে তারা। এবারই প্রথম ব্যক্তিগতভাবে নিজের নাম নিজে প্রস্তাব করার সুযোগ রাখা হয়েছিল। নিবন্ধিত দুই ডজন রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি ছয় পেশাজীবী সংগঠন নাম প্রস্তাব করে। পাশাপাশি ব্যক্তিগত পর্যায় থেকেও অনেক নাম-প্রস্তাব জমা হয়েছে কমিটির কাছে।
এসব প্রস্তাব থেকে ৩২২ জনের নামের তালিকা গত ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করে কমিটি। তালিকা যাচাই-বাছাই করে কয়েকজন ব্যক্তির নাম একাধিকবার পাওয়া যায়। সংশোধনের পর তালিকায় থাকে ৩১৫ জনের নাম। ১৭ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে সেই তালিকা ছোট করে ৫০ জনে নামিয়ে আনে সার্চ কমিটি। পরে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বৈঠকে তালিকা আরও ছোট করে ২০ জনে এবং ২০ ফেব্রুয়ারি বৈঠকে ১২-১৩ জনে নামিয়ে আনার কথা জানানো হয়েছে কমিটির পক্ষ থেকে। বিএনপি, সিপিবি-সহ বেশ কয়েকটি দল কোনো তালিকা দেয়নি সার্চ কমিটিকে।
সার্চ কমিটির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ না করার বিষয়ে জানতে চাইলে সুজনের (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা অন্তত তিন দিন আগে সার্চ কমিটির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের কথা বলেছিলাম। এখন সার্চ কমিটি বলছে তালিকা প্রকাশ করা হবে না। তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইনে ৪(১) ধারায় সার্চ কমিটির দায়িত্ব ও কার্যাবলি বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘অনুসন্ধান কমিটি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করিয়া দায়িত্ব পালন করিবে।’ এখানে স্বচ্ছতার কথা বলা আছে। স্বচ্ছতা মানে কোনো কিছু গোপন না রাখা। এখন যদি নাম প্রকাশ না করা হয়, তাহলে এটা আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হবে না, বলে জানান সুজন সম্পাদক। এদিকে গতকাল বনানীতে এক আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, রাষ্ট্রপতির কাছে সার্চ কমিটির দেওয়া নামগুলো প্রকাশ না হলে মানুষের মাঝে একটা সংশয় ও সন্দেহ থেকে যাবে। সার্চ কমিটির দেওয়া নামগুলো প্রকাশ হলে এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ থাকবে না। তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে দেওয়া নাম প্রকাশ না হলে প্রস্তাবিত নাম থাকবে নাকি বাইরে থেকে নাম অন্তর্ভুক্ত হবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যাবে। তাই সার্চ কমিটির দেওয়া নামগুলো প্রকাশ করা উচিত।