ফেরার আশ্বাস পেলে আদালতে যাবেন খালেদা’, পরোয়ানা বাতিল আবেদনের শুনানী বুধবার

Slider জাতীয়

Khaleda_sm_803126393

Decrease font Enlarge font
ঢাকা: জামিন সাপেক্ষে কার্যালয়ে ফিরে আসার আশ্বাস এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পেলে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বুধবার (৪ মার্চ) আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। এদিকে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ইস্যুকৃত আদালতের গ্রেফতারী পরোয়ানা বাতিল আবেদনের শুনানী অনুষ্ঠিত হবে আগামী কাল বুধবার।

মঙ্গলবার (৩ মার্চ) তার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার‌্যালয়ে দলের চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা এ তথ্য জানান।

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যদিও এখনো আমরা গ্রেফতারি পরোয়ানার কপি হাতে পাইনি, তারপরও যদি আদালতে যেতে এবং আত্মসমর্পণ করতে হয়, তাহলে তিনি (খালেদা জিয়া) আদালতে যেতে ইচ্ছুক। তবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও কার্যালয়ে ফিরে আসার আশ্বাস দিতে হবে।

তিনি বলেন, এখানে দু’টি বিষয় আছে। একটি হচ্ছে, বিচারিক আদালতের প্রতি আমরা অনাস্থার আবেদন জানিয়েছি। ব্যাপারটি উচ্চ আদালতে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। ওই আবেদনের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিচারিক আদালত আইনগতভাবে ও নৈতিকতার দিক থেকে এ মামলার শুনানি করতে পারেন না। কারণ, তার বিপক্ষে তো আমরা অনাস্থা দিয়েছি। তার তো নৈতিকতার দিক আছে যে, আমার বিপক্ষে অনাস্থার আবেদন দিয়েছে, দেখি উচ্চ আদালত কি বলেন।

আরেকটি ব্যাপার হলো, গ্রেফতারি পরোয়ানা এখনো খালেদা জিয়া হাতে পাননি। কিন্তু তারপরও যদি আদালতে হাজির হতে হয়, আত্মসমর্পণ করতে হয়, তাহলে খালেদা জিয়া অবশ্যই আত্মসমর্পণ করতে ইচ্ছুক।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা ওই দুই দুর্নীতি মামলার বিচার চলছে রাজধানীর বকশিবাজারে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে স্থাপিত তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের অস্থায়ী আদালতে। শুনানিতে দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত থাকায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি খালেদাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। অন্য দু’জন হচ্ছেন- মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ।

মামলাটির অপর আসামি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমানকেও বুধবার আদালতে হাজির করতে তার আইনজীবীদের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ছয় আসামির অন্য দু’জন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

এর আগে দুই দুর্নীতি মামলার শুনানিতে বুধবার আদালতে হাজির হচ্ছেন না বলে সোমবার (২ মার্চ) বাংলানিউজকে জানান অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া। তিনি জানান, নিরাপত্তাজনিত কারণে আদালতে যাচ্ছেন না খালেদা জিয়া।

বুধবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার দ্বিতীয় সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। একই দিন অনুষ্ঠিত হবে গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহারে খালোদা জিয়ার করা আবেদনের শুনানিও। মঙ্গলবার খালেদার পক্ষে তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া ওই আবেদন জানালে শুনানির এ দিন ধার্য করে দিয়েছেন আদালত।

এর আগে এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন বাদী ও প্রথম সাক্ষী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশিদ।

গত ২৮ জানুয়ারি বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে মামলার আদালত পরিবর্তনে হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) এ আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চে। তাই ওই আবেদনের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ স্থগিত রাখার জন্য বুধবার আবেদন জানানো হবে বলেও জানান খালেদার আইনজীবীরা।

গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের সুপারিশে আইন মন্ত্রণালয় এ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়ের বদলে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ হিসাবে নিয়োগ দেয় আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবু আহমেদ জমাদারকে।

নানা কারণ দেখিয়ে মামলা দু’টির শুনানির জন্য নির্ধারিত ৬৩ কার্যদিবসের মধ্যে ৫৬ কার্যদিবসই অনুপস্থিত থেকেছেন খালেদা জিয়া, হাজির হয়েছেন মাত্র ৭ দিন। কোনো আসামিই আদালতে না থাকায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশিদকে আসামিপক্ষের জেরাও বাতিল করেছেন আদালত।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।

অন্যদিকে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দায়ের করা হয়। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান।

মামলাটির অভিযোগে বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।

জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *