ভালোবাসা মনের গহিনে বহমান এক পবিত্র অনুভূতি। যা একজনের প্রতি আরেকজনের টান ও আকর্ষণের কারণে হয়ে থাকে। সৃষ্টিগতভাবেই মানুষের মধ্যে ভালোবাসার উপাদান রয়েছে। আল্লাহ মানুষকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করে তাদের মধ্যে একে অপরের প্রতি আকর্ষণ ও ভালোবাসা তৈরি করে দিয়েছেন। ভালোবাসা আল্লাহর মহান এক নেয়ামত। কোরআনে আছে, তাঁর (আল্লাহ) এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদেরই মধ্য থেকে স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে গিয়ে শান্তি লাভ কর এবং তিনি তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই এর ভিতর নিদর্শন আছে সেই সব লোকের জন্য যারা চিন্তাভাবনা করে। (সুরা রুম)
তাই একে অপরের প্রতি ভালোবাসা অনুভব করাটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করাটাই ভালোবাসার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। আল্লাহর জন্য গড়ে ওঠা ভালোবাসা স্থায়ী হয়। এটাই প্রকৃত ভালোবাসা। এতে থাকে পবিত্রতা ও স্বর্গীয় সুখ। এটা পরিপূর্ণ রূপে পাওয়া যায়, আল্লাহ ও তাঁর রসুলের ভালোবাসায়। মা বাবা, স্ত্রী ও অন্য আত্মীয়স্বজন ও মুমিনদের পারস্পরিক ভালোবাসায়। হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য ভালোবাসে, আল্লাহর জন্য ঘৃণা করে, আল্লাহর জন্য দান করে, আল্লাহর জন্যই দান করা থেকে বিরত থাকে, তার ইমান পরিপূর্ণ হলো। (আবু দাউদ)। আরেক হাদিসে আছে, আল্লাহ সাত শ্রেণির ব্যক্তিকে কিয়ামতের দিন তাঁর ছায়ায় আশ্রয় দিবেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো, ওই দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে পরস্পরে ভালোবাসা স্থাপন করে। (বোখারি)
পক্ষান্তরে যে ভালোবাসা গড়ে উঠে শুধু আবেগ বা কুপ্রবৃত্তির চাহিদা পূরণের উদ্দেশে- সে ভালোবাসায় না থাকে ভালোবাসার স্নিগ্ধতা, না থাকে পবিত্রতা। না থাকে কোনো সুখ। স্থায়ীও হয় না সেটা। সে ভালোবাসা মানুষের ইহকাল-পরকাল উভয় জগৎকে ধ্বংস করে দেয়। ধ্বংস করে মানুষের মনুষ্যত্ব। জাগ্রত করে মনের পশুত্ব। দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমান যুগের অধিকাংশ ভালোবাসাই হচ্ছে এ ধরনের। ভালোবাসার নামে মানুষ লিপ্ত হচ্ছে নানান অশ্লীলতা ও বেহায়াপনায়। ভালোবাসাকে ঘিরে উৎপত্তি হচ্ছে নানান অপসংস্কৃতি ও গর্হিত কর্মকান্ড। যার উদাহরণ ১৪ ফেব্রুয়ারি। এ দিনকে ভ্যালেন্টাইনস ডে বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস নামে উদযাপন করা হয়।
এ দিবস এলেই একশ্রেণির যুবক-যুবতী প্রেমের জোয়ারে উন্মাতাল হয়ে ওঠে। নিজেদের রূপ-সৌন্দর্য উজাড় করে প্রদর্শনের জন্য রাস্তায় নেমে আসে। এমন কর্মকান্ড ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। কোরআনে আছে, যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার হোক এটা কামনা করে, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে আছে যন্ত্রণাময় শাস্তি। (সুরা নূর)।
ভালোবাসা হবে কেবল বিয়ের পরেই। বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়, এর মধ্যে অনেক সওয়াবও আছে, কল্যাণও আছে। ভালোবাসা দিবসের নামে ইমান বিধ্বংসী কার্যকলাপ থেকে আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। আমিন!
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।