ফেসবুক লাইভে এসে নিজের পিস্তল দিয়ে মাথায় গুলি করে ব্যবসায়ী আবু মহসিন খানের আত্মহত্যার ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। ধানমন্ডি থানায় এ অপমৃত্যুর মামলাটি করেন আবু মহসিন খানের জামাতা চিত্রনায়ক রিয়াজ।
ফেসবুক লাইভে মহসিন খানের ‘আত্মহত্যার’ ঘটনায় মামলা
বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকরাম আলী মিয়া বাংলা গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আবু মহসিন খানের মৃত্যুর ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে। তার মেয়ের জামাই চিত্রনায়ক রিয়াজ মামলাটি করেছেন।
রাজধানীর ধানমন্ডি ৭ নম্বর রোডের ২৫ নম্বর বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন আবু মহসিন খান। তিনি বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে ১০টায় নিজের লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা পথ বেছে নেন বলে জানায় পুলিশ।
আত্মহত্যার আগে সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকের লাইভে এসে কথা বলেন আবু মহসিন খান। এ সময়ে তিনি ব্যক্তিগত নানা হতাশার কথা তুলেছেন।
তার আত্মহত্যার ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। আত্মহত্যার আগে আবু মহসিন খানের দেওয়া বক্তব্যে যাদের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে তাৎক্ষণিকভাবে তা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
ফেসবুক লাইভে তিনি বলেন, আমি মহসিন। ঢাকায় থাকি। আমার বয়স ৫৮ বছর। কোনো এক সময়ে আমি ভালো ব্যবসায়ী ছিলাম। বর্তমানে আমি ক্যানসারের রোগী। তাই আমার ব্যবসা কিংবা কোনো কিছুই নেই। ভিডিও লাইভে আসার উদ্দেশ্য হলো—মানুষের বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং আমার যে এক্সপেরিয়েন্স, সেটা শেয়ার করলে হয় তো সবাই জানতে পারবে, সবাই সাবধানতা অবলম্বন করবে।
তিনি আরও বলেন, গত ৩০ তারিখ আমার খালা মারা যান। তার একটি ছেলে আমেরিকায় থাকেন, মা মারা গেল অথচ ছেলেটি আসল না। এটা আমাকে অনেক দুঃখ দিয়েছে। কষ্ট লেগেছে। আজকে আমার আরেক খালা মারা গিয়েছেন। তারও একটি ছেলে আমেরিকায় ছিল। অবশ্য তার তিনটা ছেলে ইঞ্জিনিয়ার। তিনজনই বর্তমানে বাংলাদেশে আছেন। তারা হয়তো দাফন–কাফনের কাজ সম্পন্ন করছে। সেদিক দিয়ে বলব, এই খালা অনেকটা ভাগ্যবান।
মহসিন খান বলেন, আমার একটা মাত্র ছেলে। সে অস্ট্রেলিয়াতে থাকে। আমার বাসায় আমি সম্পূর্ণ একা থাকি। আমার খালা মারা যাওয়ার পর থেকে আমার ভেতরে খুব ভয় করছে। আমি যদি আমার বাসায় মরে পড়েও থাকি, আমার মনে হয় না যে, এক সপ্তাহ কেউ জানতে পারবে, আমি মারা গেছি।
তিনি বলেন, ছেলেমেয়ে-স্ত্রী যাদের জন্য যাই কিছু আমরা করি। আমরা সব কিছু করি সন্তান এবং ফ্যামিলির জন্য। আপনি যদি একশ টাকা ইনকাম করেন, আয় করেন, তার টোয়েন্টি পারসেন্ট টাকাও আপনি নিজের জন্য ব্যয় করেন না। যদি টোয়েন্টি পারসেন্ট টাকা আপনি নিজের জন্য ব্যয় করেন, তাহলে ৮০ পারসেন্ট টাকা আপনার ফ্যামিলির জন্য ব্যয় হয়।গত করোনা শুরুর আগ থেকে আমি বাংলাদেশে আছি। একা থাকা যে কী কষ্ট, যারা একা থাকে, তারাই একমাত্র বলতে পারে বা বোঝেন।
তিনি আরও বলেন, যাদের জন্য আমি বেশি করছি, প্রত্যেকটা লোকের কাছে আমি প্রতারিত হয়েছি। আমার এক বন্ধু ছিল, নাম কামরুজ্জামান বাবলু। যাকে আমি না খেয়ে তাকে খাইয়েছি। সে আমার ২৩ থেকে ২৫ লাখ টাকা মেরে দিয়েছে।
কথা বলতে বলতেই তিনি ফেসবুক লাইভে নিজের মাথায় গুলি করেন।