বেশ কয়েক দশক ধরেই সঠিক ভোট কারণে অকারণে নানা বিতর্কে পড়ে আছে। ভোটাররা ভোট দিতে গিয়ে রক্তাক্ত জখম, গ্রেফতার বা খুনও হচ্ছেন। ভোটের আগেই বিজয়ী অনেকের হওয়ার প্রথা চালু হয়ে গেছে। স্থানীয় সরকারে জাতীয় প্রতীক সঠিক ভোটকে আরো দূরে ঠেলে দিচ্ছে। রাজনৈতিক নানা সমীকরণ ভোটের গণতন্ত্রকে মূল জায়গা থেকে ছিটকে ফেলতে চাইছে। মানুষ এখন ভোট দিতে ভয় পায়। সরকারী দলের ভোটই চলছে বলা চলে এখন। কারণ সরকারী দলের ভোটাররা ভোট দিতে নিরাপদ মনে করে। ইভিএমএ ভোট দিতে গিয়ে কোন টিপে ভোট কোথায় যায়, এ নিয়ে জনমনে নানা সন্দেহ তৈরী হয়ে গেছে। সরকারী দলের প্রতীকপ্রাপ্ত প্রার্থীর বিরুদ্ধে একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের কথিত লড়াইকে আমরা অংশ গ্রহনমূলক ভোট বলছি। হয়ত এই লোক দেখানো ভোট বিশে^ আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে এই আশায় আমরা ভোট ভোট খেলছি।
সাম্প্রতিক সময়ে সরকারী দল ও সরকারী দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে অনুষ্ঠিত কথিত অংশগ্রহনমূলক নির্বাচন মানুষের মধ্যে একটি আশার আলো জাগালেও এখন তা প্রমান হয়ে গেছে যে, এই ভোট বিশ্বে দেখানোর জন্য একটি পাতানো ভোট ভোট খেলা। পরিস্থিতির কারণে মানুষ বুঝে গেছে এই ভোট কেন হচ্ছে। যে কারণে এই লোক দেখানো ভরা মাঠে ভোটের খেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেই কারণেও গুঁড়ে বালি। কারণ বিশ^ আমাদের এই ভোট খেলার অর্থ বুঝেই আমাদের উপর নিষেধাজ্ঞা দিতে শুরু করেছে। সম্ভাবনা বলছে, সামনে আরো নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। মানে হলো, যেখানে ভুতের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। যেহেতু আমাদের ইমেজ আর ফিরল না তাই এই ভোট ভোট খেলা বাদ দিয়ে দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্তদেরই জনপ্রতিনিধি ঘোষনা করা উচিত। এতে ভোট ভোট খেলা থেকে ভালো ফল আসতে পারে।
গেলো শুক্রবার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন বা বিএফডিসিতে ভোট হয়ে গেলো। ৩৬৫ ভোট গণনা করতে আমাদের সারারাত লেগে গেলো। চিত্রনায়ক ও নায়িকাদের ভোট বলেই দেরী হয়ে থাকতে পারে। কারণ এই ভোট গুলোর ওজন বেশী হয়ে থাকতে পারে বলেই ৩৬৫ ভোট গণনায় সারারাত লেগে গেছে। এই ভারী ভোটগুলো নেয়ার দিন পরিবেশ এতই সুন্দর রাখা ছিল যে, বিএফডিসির পরিচালক ও প্রয়োজকদেরই গেটের বাইরে রেললাইনে বসে থাকতে হয়েছে। এই পরিস্থিতির উন্নতি করতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনও ধরেননি বিএফডিসির নির্বাচন কমিশন। ভোটের পরিবেশ সুন্দর রাখার এই ব্যবস্থা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কারণ বিএফডিসির ভোটার যারা তৈরী করেন তারাই ভোটের মাঠে প্রবেশ করতে পারেনি। গুড, ভেরী গুড। ভোটও চমৎকার। তবে ভোটের ফলাফলের পর জানা গেলো ভোটের মধ্যে ঘটে যাওয়া একটি রসালো গল্প। ভোটে পরাজিত সাধারণ সম্পাদক চিত্রনায়িকা নিপুন সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রকাশ্যে তার গালে চুমু দেয়া প্রস্তাব দিয়েছেন। নিপুন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের গালে চুমু দেননি বলেই তিনি পরাজিত হয়েছেন ভেবে পুন:রায় ভোট গণনার আবেদন করেন। তবুও চুমুর কাজটি হলো না। মানে চুমুর কাজ গণনায়ও হল না। বাহ! চমৎকার ভোট। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের গালে চুমু না দেয়ায় প্রার্থীই ফেল! এমনটি হলে চুমু দেয়াই ভালো ছিল। পাশ তো করা যেত, তাই না! এই চুমুকে অভিনয় হিসেবে মনে করলে চুমু দিয়েই পাশ করা যেত।
সাধারণ মানুষ এ সকল বিষয় পর্যবেক্ষন করে বলছেন, ভোটের নামে তামাশা না করে চুমুর প্রতিযোগিতা করাই ভালো। যে বেশী চুমু দিবে সে তত বেশী যোগ্য হবে। চুমু দিয়ে ভোটের কাজ হলে অনেক উপকারও হবে। কারণ ভোটের পরিবর্তে চুমু কাজ করলে ভোট নেয়ার জন্য টাকা পয়সা ও লোকবল বেঁচে যাবে। মানুষকে কষ্ট করতে হবে না। সহিংসতার আশংকা থাকবে না। মানুষের মধ্যে অশান্তিরও সম্ভাবনা তৈরী হবে না। তাই এখন ভোটের পরিবর্তে চুমুর নির্বাচনই ভালো। এই পদ্ধতিটি বিদায়ের কালে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের টিম, পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে নিতে পারেন।
রিপন আনসারী
সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী।