সিলেট: লেখক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, আমি ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে পার্থক্য নেই। আমার সঙ্গে সরকারের উচ্চ মহলের কথা হয়েছে।
তারা যদি আমাকে দেওয়া কথাগুলো না রাখে, তবে বুঝবো, শুধু আমি কিংবা শিক্ষার্থীদের সঙ্গেই নয়, পুরো বাংলাদেশের প্রগতিশীল মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে।
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে অনশনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙানের পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, সরকারের উচ্চ মহল আমাকে অনুরোধ করে এখানে পাঠিয়েছেন। তারা আমাকে কথা দিয়েছেন। আমি তাদের অনুরোধ করবো কথাগুলো যেনো রক্ষা করা হয়। আমি ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।
তিনি বলেন, আন্দোলনে টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য করায় আমার ছাত্রদের আটক করা হয়েছে। এ মুহূর্তে তাদের হাজতে রাখা হয়েছে। আমি আশা করবো তাদের যেনো মুক্ত করে দেওয়া হয়। তাছাড়া যখন প্রয়োজন হবে, কারো নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, এগুলো যেনো না হয়। তারা যে কি পরিমাণ কষ্ট করেছেন, তাদের খাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছেন।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, আপনারা যে ভূমিকা রেখেছেন, ভবিষ্যতেও যেনো এ ধারা বজায় রাখেন।
তিনি বলেন, আমি অনশন ও আন্দোলনকে ভিন্নভাবে দেখি। এই আন্দোলনের যে উদ্দেশ্য, এজন্য অনশন করার প্রয়োজন নেই। যে মানুষটার জন্য আন্দোলন করেছে, তারও প্রয়োজন নেই।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিষয়ে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, যেখানে চিকিৎসক নেই। তারা যেভাবে সবকিছু ব্যবস্থা (ম্যানেজ) করেছেন। ছেলে-মেয়েদের সুস্থ রেখেছেন। হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। যখন যেভাবে প্রয়োজন, সেটা করেছেন। আমি তাদের বিষয়ে আশাবাদী, তারাই আগামীর বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, সরকারের উচ্চ মহল আমার কাছে এসেছেন। তারা আমাকে অনুরোধ করে পাঠিয়েছেন। আমি প্রত্যাশা করবো, আমার কথাও রাখবেন। তবে এক্ষেত্রে কোনো সময় বেঁধে দিতে চাই না। এছাড়া আমার কথায় শিক্ষার্থীরা অনশন ভেঙেছেন, আমি তাতে অত্যন্ত খুশি।
ড. ইয়াসমিন হক বলেন, আমরা ঢাকায় থাকতে তাদের সঙ্গে আলাপ করেছি। তারা বলেছেন, স্যার/ম্যাডাম আপনারা আসেন, অবশ্যই আপনাদের কথা শুনবো। তারা আমাদের কথা রেখেছেন। এটা আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া।
ছাত্রদের দানবের কাছে রেখে যাওয়া প্রসঙ্গে ড. জাফর ইকবাল আরও বলেন, ছাত্রদের আন্ডারএস্টিমেট করবেন না, এতটুকুই বলতে চাই।
তিনি বলেন, তিন বছর আগে আমি যখন অবসরে যাই, তখন চিঠি লিখে দিয়ে যাই। বলেছিলাম, ছাত্রদের আপনি অবহেলা করবেন না। ছাত্রদের যে ক্ষোভ আছে, তা বিক্ষোভে রূপ নেবে। তা এখন অক্ষরে অক্ষেরে ফলেছে। এটা তিন বছরের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ। যারা আন্দোলন করেছেন, তারা একেবারেই সাধারণ শিক্ষার্থী। তারা সঙ্গত কারণে আন্দোলন করেছেন। তাদের দাবি যৌক্তিক। পুলিশ তাদের ওপর হামলা করেছে, তাই তারা আন্দোলন করেছে। ছাত্রদের ওপর বর্বর হামলার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। যখন হামলা হয়, তখন শিক্ষকদের ঝাঁপিয়ে পড়া উচিত ছিল। কিন্তু তারা সেটা করেননি।
তিনি বলেন, এরকম অভিভাবক যদি সবাই হতো, তবে দেশটা অনেক এগিয়ে যেতো। আমি চাইবো, শিক্ষক যারা আছেন, তারা যেনো দায়িত্বশীল হন।
ড. ইয়াসমিন হক বলেন, শিক্ষকদের বর্বর পুলিশি হামলার ঘটনা ঘটেছে। আমি এই ঘটনায় খুবই আহত। কবে কাটিয়ে উঠতে পারবো জানি না।
তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন, তোমরা এরকম হয়ো না, তোমাদের মধ্যে থেকে অনেকে শিক্ষক হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্ত বুদ্ধির চর্চা বন্ধ করে দেওয়া সম্পর্কে ড. জাফর ইকবাল বলেন, একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের সংগঠন ছিল। ছেলে-মেয়েরা ক্রিয়েটিভ কাজ করেন নেতৃত্বের গুণাবলী থাকে। যে কারণে শাবি শিক্ষার্থীরা অন্য কোথাও গেলে তাদের ক্রিয়েটিভিটিতে চেনা যেতো। কিন্তু তিনি (ভিসি) এসব কিছু বোঝেন না, অ্যাকাডেমিক, শিক্ষা কিছুই বোঝেন না।