বাংলাদেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও সহিংসতা নিয়ে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র। তবে এ সঙ্কট অভ্যন্তরীণভাবে সমাধান করতে হবে। গণতান্ত্রিক দেশে সংঘাতের রাজনৈতিক কোন স্থান নেই। বিরোধীদের জন্য রাজনৈতিক সুযোগ আর নাগরিক সমাজ, গনমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আজ বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে বারোটায় ওয়াশিংটনের ফরেইন প্রেস সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল। ব্রিফিংয়ে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। প্রশ্নোত্তর পর্বের আগে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সহিংস জঙ্গিবাদ প্রতিহত করার বিষয়ে গত সপ্তাহে একটি বৈশ্বিক কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। ওই কনফারেন্সে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার অনেকগুলো দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ওই কনফারেন্সে এবং দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় জবাবদিহিমূলক শাসন, রাজনৈতিক সুযোগ, নাগরিক সমাজের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। এতে দেশটির রাজনৈতিক অচলাবস্থা এবং রাজনৈতিক সহিংসতা নিয়ে আলোচনায় এসব নীতির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। মি. কেরি এ পরিস্থিতিতে আমাদের উদ্বেগ এবং পরিস্থিতি উন্নতির প্রত্যাশা তুলে ধরেছেন। তিনি গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বারা সহিংস কৌশলের কোন স্থান নেই। একইসঙ্গে এটা নিশ্চিত করা প্রয়োজন যে, সরকার শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক মতামত প্রকাশের সুযোগ করে দেবে। প্রয়োজন একটি অংশগ্রহনমূলক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া। আর গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি সম্মান দেখানো হচ্ছে তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
পরবর্তীতে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তিনজন সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তর দেন নিশা দেশাই।
প্রশ্ন: এ সপ্তাহে বিরোধী নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এটাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করে কিনা? এবং যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে; বিরোধী দলের সহিংসতাসহ। এক বছর আগের নির্বাচন থেকে শুরু হওয়া অচলাবস্থা নিরসনে আপনি মধ্যস্থতাকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কোন ভূমিকা দেখছেন কিনা?
উত্তর: প্রথমত আমি আরোপিত (খালেদা জিয়ার ওপর) অভিযোগগুলো নিয়ে কোন জল্পনা কল্পনা করতে চাইনা; শুধু এটুকু বলতে চাই আমরা প্রত্যাশা করি কোন প্রকার অভিযোগ দাখিলের ক্ষেত্রে, কোন প্রকার আইনি প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে। আমরা মনে করি, গনতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য সক্ষম রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক সহিংসতার মাত্রা নিয়ে আমাদের ব্যাপক উদ্বেগ রয়েছে। সকল রাজনৈতিক দলের সহিংসতা পরিহার করা প্রয়োজন। একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলো সরকারের পক্ষ থেকে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সক্রিয় থাকার সুযোগ নিশ্চিত করা। ফলশ্রুতিতে, অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা। এসব বিষয়গুলো অভ্যন্তরীণভাবে মোকাবেলা করতে হবে। জন কেরি জানিয়েছেন, সঙ্কট নিরসনে যে কোন প্রকার সহায়তা দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত। বাংলাদেশের সরকার, বিরোধী দল, নাগরিক সমাজের সকল বিষয় নিয়ে আমরা নিয়মিত অবগত রয়েছি। তবে এসব মৌলিক ইস্যুগুলোর আভ্যন্তরীণ সমাধান হওয়া দরকার।
প্রশ্ন: শান্তি, স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্র বজায় রাখতে আপনারা বর্তমান সরকারকে বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সহ সরকার বলেছে যে তারা কোন বিদেশী চাপ মেনে নেবে না। আপনি কি মনে করেন বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে এটা প্রভাব ফেলবে কিনা? খালেদা জিয়ার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়েও আপনার মন্তব্য জানতে চাই?
উত্তর: আগের প্রশ্নে আপনার শেষ প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিয়েছি। আমি এটুকু বলবো- আমরা মৌলিকভাবে বিশ্বাস করি এগুলো অভ্যন্তরীণ ইস্যু যেগুলো বাংলাদেশের মানুষের সমাধান করতে হবে। বাং
লাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের এটা করতে হবে। বিরাজমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও সহিংসতা নিয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করি সরকার ও বিরোধী নেতারা এসব ইস্যু অ্যাড্রেস করতে পারবে এবং রাজনৈতিক অচলাবস্থা উত্তরণ করবে। সকল রাজনৈতিক পক্ষকে সহিংসতা পরিহার করতে হবে বলে আমরা আমাদের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছি। একইসঙ্গে আমরা বিশ্বাস করে গণতন্ত্রে অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি এবং বিরোধী দলের সক্রিয় থাকার সুযোগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
প্রশ্ন: সম্প্রতি মাহমুদুর রহমান মান্না নামক এক রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিউইয়র্কে অবস্থান কারী এক বিরোধী নেতার সঙ্গে তিনি ফোনালাপ করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তিনি সামরিক অভ্থ্যত্থানে উস্কানিমূলক আলোচনা করেছেন। এছাড়া অন্যান্য রাজণৈতিক বিষয় আলোচনা করেছেন। আপনি কি মনে করেন এ ধরণের গ্রেপ্তার বৈধ?
উত্তর: আমি সুনির্দিষ্ট কোন ঘটনা নিয়ে কোন মন্তব্য করব না। এসব বিষয়ে মন্তব্য করার মতো আমার কাছে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য প্রমাণ নেই। তবে আমরা গভীরভাবে বিশ্বাস করি বাংলাদেশের মতো গণতান্ত্রিক একটি দেশে নাগরিক সমাজের জন্য স্পেস ও গণমাধ্যমের জন্য মৌলিক স্বাধীনতা থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আমরা আশা করি তেমনটাই হবে।