শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রাক্তন ও বর্তমান পাঁচ শতাধিক ছাত্রী। জাবি ছাত্রীদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য তাঁর পদত্যাগও দাবি করেছেন তাঁরা।
আজ শুক্রবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের নবম ব্যাচ থেকে ৪৯তম ব্যাচ পর্যন্ত ৫০৪ জন ছাত্রীর সই করা বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে এখন আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যেই উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের সহজে কেউ বউ হিসেবে নিতে চায় না।’ এ মন্তব্যের প্রতিবাদে গত বুধবার ফরিদ উদ্দিন আহমেদের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ পৃথক বিবৃতিতে ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানান।
ছাত্রীদের বিবৃতিতে বলা হয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নিয়ে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের মন্তব্য শুধু জাহাঙ্গীরনগরের ছাত্রীদের নয়, বরং বাংলাদেশের সব নারীর জন্য অপমানজনক। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও দেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে এমন একজন নারীবিদ্বেষী ব্যক্তির অবস্থান স্পষ্টত রাষ্ট্রের ব্যর্থতা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক পুরুষতান্ত্রিক চরিত্র উন্মোচন করে। এই বক্তব্য অপ্রাসঙ্গিকভাবে নারীকে কলঙ্কিতকরণ এবং নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণকে বৈধতা দান করে।
প্রশাসনের কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার ফলে এই রাষ্ট্রে নারীদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। বিবৃতিতে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি এবং একাত্মতা পোষণ করা হয়। বলা হয়, অনতিবিলম্বে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ এবং তাঁর বক্তব্যের জন্য জনসমক্ষে ক্ষমা প্রার্থনা করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
জাবি ছাত্রলীগের নিন্দা
ছাত্রীদের নিয়ে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের ‘আপত্তিকর’ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সংগঠনের সভাপতি আকতারুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রতিবাদলিপিতে ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বক্তব্যকে ‘অবমাননাকর ও কুরুচিপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে নারীর প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের উদ্দেশে এ ধরনের মন্তব্য দুঃখজনক। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মুক্তচর্চার প্রাণকেন্দ্রে দায়িত্বশীল একজন উপাচার্যের কাছ থেকে এমন বক্তব্য কোনোভাবেই কাম্য নয়।