দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে অভিনয় করা অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমু। দুদিন নিখোঁজ থাকার পর গেল ১৭ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ব্রিজের কাছে তার বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ।
পরে জানা যায়, এই অভিনেত্রী পারিবারিক কলহের জেরে স্বামীর হাতে নৃশংসভাবে খুন হন। তার করুণ মৃত্যু চলচ্চিত্রপাড়ায় নামিয়েছে শোক, তৈরি করেছে চাঞ্চল্য।
এদিকে শিমুর মৃত্যু বেশ মোটা দাগে প্রভাবিত করেছে চলমান শিল্পী সমিতির নির্বাচনকে। ২০১৭ সালে মিশা-জায়েদ প্যানেল কমিটি ক্ষমতায় আসার পর শিমুর ভোটাধিকার কেড়ে নেয়। তার সদস্যপদ বাতিল করে দিয়ে সহযোগী সদস্য করা হয়৷ সদস্য হিসেবে সুযোগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত ছিলেন।
সেই ক্ষোভে নিজের ভোটাধিকার ফিরে পেতে আন্দোলন করেছিলেন শিমু। নানা সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। এর ফলে সমিতি থেকে ভোটাধিকার হারানো আলোচিত ১৮৪ জন শিল্পীর একজন হিসেবেই তাকে চেনে সবাই।
গেল চার বছর ধরে যিনি সহযোগী সদস্য থেকে নিজের সদস্যপদ ফিরে পেয়ে ভোটাধিকারের দাবিতে আন্দোলন করছিলেন, সেই শিমু মৃত্যুর পরদিনই সমিতির সদস্য হয়ে গেলেন অনায়াসে!
১৯ জানুয়ারি এফডিসিতে দেখা গেল শিমুর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ব্যানার তৈরি করেছে মিশা-জায়েদ প্যানেল। যার একটি দেয়া হয়েছে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নামে, অন্য একটি আছে মিশা-জায়েদ প্যানেলের নামে। ব্যানারগুলোতে শিমুর পরিচয় দেয়া হয়েছে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সমিতির সদস্য চিত্রনায়িকা শিমু’। এই পরিচয় দৃষ্টি কেড়েছে সবার। জন্ম দিয়েছে আলোচনারও।
অনেকে বিষয়টিকে মৃত শিমুর সঙ্গে উপহাস হিসেবে দেখছেন। তারা বলছেন, যে শিমুকে মিশা-জায়েদ নেতৃত্ব সদস্য থেকে সহযোগী সদস্য বানিয়ে ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছিলো সেই তারাই মৃত্যুর পর তাকে সদস্য বানিয়ে দিলো। শিমুর মৃত্যুর আবেগকে কাজে লাগিয়ে শিল্পীদের সমর্থন নিজেদের দিকে টানতেই এই কৌশল অবলম্বন করছে তারা।
ভোটের রাজনীতি গেল চার বছর ধরে শিল্পী সমিতিতে অবহেলিত শিমুকে যেন গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। তাকে নিয়ে কথা বলে আবেগ ছড়াতে পারলেই যেন লাভ। আর সেই লাভই ঘরে তোলার চেষ্টা চলছে।
শিল্পীদের মধ্যে প্রচলিত আছে ২০১৭ সালে মিশা-জায়েদ প্যানেলের বিপক্ষে গিয়ে মৌসুমীর প্যানেলকে সমর্থন দেন শিমু। সেজন্যই মিশা-জায়েদ প্যানেল নির্বাচিত হয়ে সমিতির মসনদে বসে তার ভোটাধিকার কেড়ে নেয়। সদস্য থেকে সরিয়ে সহযোগী সদস্য করে। তবে শিমুর ভোটাধিকার বাতিলের ব্যাপারে তৎকালীন সভাপতি মিশা সওদাগর জাগো নিউজকে ১৮ জানুয়ারি বলেন, ‘শিল্পী সমিতির সংবিধান অনুযায়ী টানা ২ বছর চলচ্চিত্রে কাজ না করায় শিমুর ভোটাধিকার বাতিল করা হয়। তার সদস্যপদ বাতিল করে সহযোগী সদস্য করা হয়।’
অথচ বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। সমিতিতে অনেক সদস্য রয়েছেন যারা টানা ২ বছরের অধিক সময় ধরে কোনো সিনেমায় কাজ করেননি। এমন অনেক সদস্য নির্বাচনে প্রার্থীও হয়েছেন। সেটা কীভাবে সম্ভব হলো এ প্রশ্নের কোনো উত্তর মেলেনি!
১৯৯৮ সালে কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘বর্তমান’ সিনেমা দিয়ে রুপালি পর্দায় অভিষেক হয় রাইমা ইসলাম শিমুর। এরপর একে একে অভিনয় করেছেন ৫০টিরও বেশি সিনেমায়। কাজ করেছেন বহু নাটক।
অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজক হিসবেও সক্রিয় ছিলেন তিনি।
বাংলাদেশের অনেক গুনী পরিচালকের সাথে কাজ করেছেন শিমু। সে তালিকায় আছেন মরহুম চাষী নজরুল ইসলাম, পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, এ জে রানা, শরিফুদ্দিন খান দ্বীপু, এনায়েত করিম, শবনম পারভীন।
শিমু অভিনয় করেছেন রিয়াজ, অমিত হাসান, বাপ্পারাজ, জাহিদ হাসান, মোশারফ করিম, শাকিব খানসহ অনেক গুণী ও জনপ্রিয় অভিনেতাদের বিপরীতে।