শেষ হলো নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। গতকাল রবিবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। এ সময় কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। কিন্তু দেশে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে এই নির্বাচন হলেও ভোটারদের মধ্যে ন্যূনতম স্বাস্থ্য সচেতনতা দেখা যায়নি। সর্বত্রই স্বাস্থ্যবিধি ছিল উপেক্ষিত। বেশিরভাগ ভোটারের মুখে ছিল না মাস্ক। এমনকি ভোটারদের লাইনে মানা হয়নি সামাজিক দূরত্ব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে যখন করোনা সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, আক্রান্তের সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় জ্যামিতিক হারে, তখন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্বাস্থ্যবিধির চরম অবমাননা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এর পরিণাম ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই আমরা দেখাতে পারব।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, আগেরদিন সকাল ৮টা থেকে গতকাল একই সময় পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে ৫২৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৩৫ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৬.৬৭ শতাংশ। অথচ এর আগেরদিন এই হার ছিল ৫.৮ শতাংশ। শনিবার নারায়ণগঞ্জে ২৩৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৪ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিল। এই পরিসংখ্যানই বলে দেয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শহরে যে গণজমায়েত হয়েছে তাতে করোনা সংক্রমণ আরও বাড়বে।
গতকাল সকালে নগরীর জালকুড়ি, সিদ্ধিরগঞ্জ, চাষাঢ়ার ভোট কেন্দ্র ঘুরে সকাল থেকেই বিপুল ভোটারের উপস্থিতি দেখা গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় লাইন করে ভোটাররা অপেক্ষা করলেও মানা হয়নি সামাজিক দূরত্ব। এমনকি বেশির ভাগ ভোটারের মুখে ছিল না মাস্ক। ভোটকেন্দ্রের সামনে নির্বাচনে প্রার্থীদের এজেন্ট ও সমর্থকদেরও জটলা করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া উৎসুক জনতার ভিড় লেগেই ছিল। তাদের মধ্যে মাস্ক পরা বা সামাজিক দূরত্ব মানার কোনো বালাই ছিল না। এমনকি ভোটকেন্দ্রে এবং কেন্দ্রের বাইরে প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকদের একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করতেও দেখা গেছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. পারভেজ জাবীন আমাদের সময়কে বলেন, দেশে করোনার সর্বাধিক সংক্রমণশীল ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টর-এর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এর প্রভাবে বিপুলসংখ্যক মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে এবং অন্যদের মধ্যে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। নারায়ণগঞ্জে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় এর পরিণাম আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে আমরা দেখাতে পারব। দেখা যাবে সেখানে করোনা সংক্রমণ অধিক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়েছে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের উচিত আগামী কয়েকদিন বিজয় মিছিলসহ অন্যান্য কর্মসূচি থেকে জনসাধারণকে বিরত রাখা।