সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ): নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, জনতাই আমার শক্তি। আমি মানুষের কাছেই যাই। তাই বহিরাগতদের দিয়ে নির্বাচন করব কেন? প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারের অভিযোগ প্রসঙ্গে গতকাল শুক্রবার সকালে নিজ বাসায় সাংবাদিকদের এ কথা বলেন ডা. আইভী।
গতকালই সকালে সংবাদ সম্মেলন করেন সরকারদলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ করেন স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। আইভী বহিরাগতদের এনে নির্বাচন পরিচালনা করছেন, সার্কিট হাউসসহ বিভিন্ন হোটেলে তারা থাকছেন- তৈমূরের এমন অভিযোগের জবাবে আইভী সাংবাদিকদের বলেন, সার্কিট হাউসে কারা থাকছেন আমার জানা নেই।
আমি যতটুকু জানি অনেকেই নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসেন। সেটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন বা অন্য কেউ হতে পারে। তবে কারা আসছেন, কারা থাকছেন আমার জানা নেই। উনি (তৈমূর) কাকে বুঝিয়েছেন জানি না। কারণ আমার বাড়ি নারায়ণগঞ্জে, মানুষও নারায়ণগঞ্জের। আমার বাড়ি রূপগঞ্জ নয় যে, বহিরাগত কাউকে আনব।
ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের নারায়ণগঞ্জ আসা প্রসঙ্গে আইভী বলেন, তারা হয়তো তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। বিভিন্ন কারণে হয়তো আসছেন। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি, উনারাও কিন্তু জানেন আইভী কীভাবে রাজনীতি করে। কীভাবে ভোটারদের কাছে যায়। যদি তা না জানতেন তা হলে কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এই সময়ে আমাকে নৌকা দিতেন না। কারণ উনিও জানেন উনার আইভী মানুষের দ্বারেই যায়। আমার একমাত্র পথ হলো জনগণ। তাই কেন্দ্রীয় নেতারা আসতেই পারেন। নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ কী করছে? তাদের অবস্থানটা কী- এটা পর্যবেক্ষণ করতে তারা আসতে পারেন। কিন্তু আমাকে তো মুক্ত করে দিয়েছেন। আমি তো সারাক্ষণ ভোটারদের কাছে যাচ্ছি। কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে বিরোধী পক্ষের অভিযোগে বিব্রত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, ঢাকার পাশেই আসলে নারায়ণগঞ্জ। এখানে নির্বাচন হচ্ছে। আসতেই পারেন। দেখতেই পারেন। আর অনেকেই বলছেন, এখানে নির্বাচন একটু ভিন্ন। তাই উনাদের অনেকেই আসেন। আমাদের প্রতিপক্ষেরও কিন্তু অনেকেই আসেন। তারা হয়তো নীরবে প্রচার করছেন।
তৈমূরের নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কা প্রসঙ্গে আইভী বলেন, আমি সব সময়ই নির্বাচনী সহিংসতার বিপক্ষে। উনি (তৈমূর) আমার চাচা। জন্মের পর থেকেই উনি আমাকে দেখছেন। এই বাড়িতে তিনি অনেকবার এসেছেন। আমার বাবার কর্মী ছিলেন। আমাদের বন্ধনটা অনেক আগের। যুদ্ধের ময়দানে হয়তো আমরা প্রতিদ্বন্দ্বী। সহিংসতা হবে বলে আমি মনে করি না। কারণ আমার কোনো বাহিনীও নেই। আর কোনোদিন সহিংসতা করিওনি। বরং সহিংসতা হলে আমার ক্ষতি হবে। ভোটাররা আসতে পারবেন না। আমি যদি বলি একটি পক্ষ এমনটা চাচ্ছে। আমার যেসব এলাকা জমজমাট, সেখানে হয়তো কেউ সহিংসতা করে ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা দিতে পারে। ভোটের দিন যাতে উৎসবমুখর পরিবেশ থাকবে এবং নারী ভোটাররা আসতে পারেন। কারণ আমি জানি এই ভোটগুলো আমার। আমি নির্বাচনে জিতবই। সুতরাং আমার বিজয় সুনিশ্চিত জেনে কেউ যদি সহিংসতা করে তা হলে এটি ঠিক হবে না। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ করব তা নিয়ন্ত্রণ আনতে।
কারা আপনার ভোটারদের বাধা দিচ্ছে, সেটি প্রতিপক্ষ নাকি নিজ দলের কেউ- এমন প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, যারা বাধা দিচ্ছেন, তারা কিন্তু একটা সময়েই এক হয়ে যায়। আপন আর পর কী? এখানে তো নির্বাচনটা হচ্ছে আইভী বনাম অনেক কিছু। সে ক্ষেত্রে অনেক পক্ষই এক হতে পারে। আমি ধারণা করছি। সহিংসতা যারা করে তারা ঘর আর বাহির হয় না। আইভীকে পরাজিত করতে অনেক পক্ষই এক হয়ে গেছে।
এ অনেক পক্ষ নিয়ে আপনি কি আপনার পুরনো অবস্থানেই রয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি আমার আগের জায়গায় রয়েছি। প্রথম থেকে যা বলেছি এখনো সেই জায়গায় আছি। বারবার বলেছি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাতে সতর্ক থাকে। বহুপক্ষের খেলা বন্ধে কেন্দ্রীয় নেতারা কি কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, আমি আসলে ওইভাবে আলাপ আলোচনা করিনি। কারণ ২৮ ডিসেম্বর থেকে খুবই ব্যস্ত ছিলাম। তা ছাড়া দলের উচ্চপর্যায়ের বিষয়ে আমার কথা না বলাই ভালো। তিনি বলেন, নির্বাচন যদি সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক হয় এবং কোথাও কেন্দ্র বন্ধ না হয় তা হলে ইনশাআল্লাহ আমি লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হব। এটি আমার চাচা নিজেও জানেন, এখানে আসলে আমার কী অবস্থা।
আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রশাসনের বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি ঠিক জানি না। উনারা কী আলাপ করেছেন। তারা বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়েছেন। আমার বিজয় নিয়ে উনারা শঙ্কিত নন। তারা কি নিজ দলের কাউকে নজরদারিতে রাখছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, তা ঠিক বলব না। কেন্দ্র কী করছে, তারাই বলবে। আমি তো আপনাদের সামাল দিতে ব্যস্ত আছি। সমর্থকদের আটক সম্পর্কে তৈমূরের অভিযোগ প্রসঙ্গে আইভী বলেন, কাকে ধরেছে আমি জানি না। জানার চেষ্টাও করিনি। নারায়ণগঞ্জ শহরে কিশোর গ্যাংয়ের অভাব নেই। কালকে রাতেও হোন্ডা মহড়া হয়েছে। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে হোন্ডা মহড়া দিয়ে নৌকার ভোট চাচ্ছে। আমার গাড়ির সামনে দুইটা হোন্ডা থাকুক তা-ও চাই না। এ শহরের মানুষ আমার চরিত্র জানে। আমি রিকশায় যাই, নিজে হাঁটি। হঠাৎ করে হোন্ডা মহড়া দিয়ে নৌকার ভোট চাওয়ার কারণটা কী? আমি তো ভয় পাচ্ছি কাউন্সিলর নির্বাচন নিয়ে সহিংসতা হয়ে আমার নির্বাচনে সমস্যা হয় কিনা। আমি বিজয়ী হব। চাচার সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে। তার সঙ্গে কাজ করব।
আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনে কে বা কারা টাকা দিচ্ছে জানি না। আমার টাক নেই। থাকলেও দিতাম না। নির্বাচনে টাকা দেওয়া নীতি-নৈতিকতার ব্যাপার। খুবই বিব্রতকর। প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করছি।
তিনি আরও বলেন, আমি বিগত সময় থেকে অন্যায়ের বিপক্ষে সোচ্চার ছিলাম। যেটাতে সোচ্চার হওয়ার প্রয়োজন সেখানে হব। বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করব না। এ শহরে খুন ও রাহাজানির বিরুদ্ধে কথা বলেছি। নিজেও কখনো এটি করি না। ভোটারদের উদ্দেশে বলব আপনারা আইভীকে চিনেন ও জানেন। আমি আপনাদের মানুষ। নিজের দায়িত্ব ইমানের সঙ্গে পালন করেছি। টাকা-পয়সার সঙ্গে লেনদেন ছিল না। কাজ করতে গেলে ভুলভ্রান্তি হতেই পারে। তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ সুন্দর, নিরাপদ ও সবুজ শহর গড়ার জন্য আপনারা আমাকে ভোট দেবেন। বিপদে আপনাদের পাশে থাকব। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি করব না।
শামীম ওসমানের অনুসারীরা নৌকার পক্ষে কি কাজ করছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, আমি জানি না কে কাজ করেছে বা করেনি। আমার দেখারও সময় ছিল না। কেন্দ্রীয় নেতারা এখানে ছিলেন। তারা দেখবেন।
এদিন বিকালে নগরীর ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় পথসভা করেন আইভী। নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিনের এ পথসভায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিম-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই, সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির, নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া সাজনু প্রমুখ।