গ্রেফতারে প্রস্তুত খালেদা জিয়া

Slider জাতীয়

10397813_10153713841803975_2769471161836142625_n

 

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া গ্রেফতারের জন্য সম্পুর্ন প্রস্তুত রয়েছেন। তাকে গ্রেফতার করা হবে এমন আশঙ্কা নিয়েই গুলশান অফিসে অবস্থান করছিলেন। তাকে যে গ্রেফতার করা হতে পারে সে কথা তিনি একাধিক বিএনপি নেতাকে আগেই বলেছিলেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তার জামিন বাতিলের পর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ইতোমধ্যে গ্রেফতারি পরোয়ানা পৌছে গেছে গুলশান থানায়। তাকে গ্রেফতার করা এখন শুধু আনুষ্টানিকতা মাত্র।
বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের পর বাংলাদেশের রাজনীতি কোন দিকে মোড় নেয় তা এখন দেখার বিষয়। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এমন এক সময় গ্রেফতারির পরোয়ানা জারি হলো যখন রাজনৈতিক অধিকার হরন, মতপ্রকাশে বাধা সৃষ্টিসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে আর্ন্তজাতিক মহলে সরকার প্রবল চাপের মুখে রয়েছে। ইতোমধ্যে আর্ন্তজাতিক গনমাধ্যমে খালেদা জিয়ার গ্রেফতারের খবর ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। তাকে গ্রেফতারের কারন হিসাবে বলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় আদালতে হাজির হতে ব্যর্থ হওয়ায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উন্থান- পতনে গ্রেফতারের ঘটনা নতুন নয়। এরশাদের স্বৈরশাসনামলে তিনি তিনবার গ্রেফতার হয়েছিলেন। খালেদা জিয়া প্রথম গ্রেফতার হন ১৯৮৩ সালের ২৭ নভেম্বর। দ্বিতীয়বার তাকে গ্রেফতার করা হয় ১৯৮৪ সালের ৩ মে। এছাড়া ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর পূর্বানী হোটেলে খালেদা জিয়া আশ্রয় নেয়ার পর পুলিশ বাহিনী তাকে টেনে হিচড়ে তুলে নিয়ে গিয়ে বাড়িতে অন্তরীন করে রাখে।
সর্বশেষ ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তাকে সেনাসমর্থিত ফখরুদ্দিন সরকার গ্রেফতার করে। মোট এক বছর এক সপ্তাহ জেলবন্দি থাকার পর ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তিনি মুক্তি পান। বর্তমানে যে মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে সেই মামলাটিও এই সরকারের আমলে দায়ের করা হয়েছিলো।
বর্তমান সরকারের আমলে ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বরের আগে তিনি নিজ বাড়িতে অবরুদ্ধ ছিলেন। এরপর ৫০ দিন যাবত অনেকটা অবরুদ্ধ আছেন গুলশান অফিসে। এরমধ্যে তার জীবনে অনেক দুর্যোগ এসেছে। ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মারা গেছেন। উচ্ছেদ হয়েছেন নিজ বাড়ি থেকে।
জীবনের শেষপ্রান্তে এসে তিনি এখন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন। তার সাথে গুলশান অফিসে অবরুদ্ধ একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন আন্দোলন সংগ্রামের ব্যাপারে খালেদা জিয়ার মনোভাবের সামান্যতম পরিবর্তন হয়নি। জেলে যাওয়া নিয়েও তিনি মোটেই শঙ্কিত নন। বরং জেলে যেতে হতে পারে এমন প্রস্তুতি শুরু থেকে ছিলো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন নেতা বলেন খালেদা জিয়ার এবারের আন্দোলনের লক্ষ ছিলো বাংলাদেশের মানুষ ৫ জানুয়ারির নির্বাচন মেনে নেয়নি এবং বর্তমান সরকার যে ম্যান্ডেটবিহীন তা প্রমান করা। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীন মহল যেভাবে জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে প্রচারনা চালিয়েছিলো বাংলাদেশ স্বাভাবিক আছে।

কিংবা এই নির্বাচন এ দেশের মানুষ মেনে নিয়েছে তা ভুল প্রমান করা। খালেদা জিয়া তাতে পুরো সফল হয়েছেন। ইতোমধ্যে আর্ন্তজাতিক মহল সরকারের এই দাবির সাথে একমত হয়নি। একই সাথে লাগাতার অবরোধে প্রমান হয়েছে যে কোনো পরিস্থিতিতে বিএনপির দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলন করার মতো সক্ষমতা রয়েছে।
বিএনপির নেতারা মনে করছেন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের মধ্যেদিয়ে আরো স্পষ্ট হয়ে যাবে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করে ক্ষমতাসীন একদলীয় শাসন প্রতিষ্টার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। যা কোনো ভাবেই আর্ন্তজাতিক মহলে গ্রহনযোগ্যতা পাবে না। বরং সরকারের ওপর নানামাত্রিক চাপ বাড়তে থাকবে। অপরদিকে বিরোধী দলের টানা অবরোধ ও হরতাল আরো প্রলম্বিত করার ক্ষেত্র তৈরি হবে। আন্দোলন যাতে নতুনমাত্রা পায় সে দিকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা সর্তক দৃষ্টি রাখছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *