১০ মার্ডারের হুমকির ‘শাস্তি’ মুচলেকা, উল্টো হুমকিদাতার জিডি

Slider রাজনীতি


কুমিল্লার চান্দিনায় জোয়াগ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের উঠান বৈঠকে ‘১০টা মার্ডারের’ হুমকিদাতা মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে আশানুরূপ ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। উল্টো ছড়িয়ে দেওয়া ভিডিও ক্লিপের বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইঞ্জি. আবদুল আউয়াল খানের ওই ছেলে। তাতে উল্লেখ করেন, ‘আমার বক্তব্য এডিটিং করে সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচারের মাধ্যমে ব্যক্তিগত সুনাম ক্ষুণœ করা হয়েছে। তাই ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য সাধারণ ডায়েরি করা প্রয়োজন।’

‘যদি ১০টা মার্ডার করা লাগে, তা-ই করবেন, বাকিটা আমি দেখবো’- নৌকার প্রার্থীর ছেলে মিজানের এমন হুমকির একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছেলের এমন বক্তব্যের কারণে প্রার্থী আবদুল আউয়াল খানকে শোকজ করেন রিটার্নিং অফিসার মাসুদ আলম সিকদার। সেই সঙ্গে হুমকিদাতা মিজানকে ডেকে নিয়ে মুচলেকা নেওয়া হয়। এরই মধ্যে শোকজের জবাব দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের আলোচিত ওই প্রার্থী। তবে এ ঘটনায় স্থানীয়দের অনেকেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তাদেরই একজন বলেন, ‘একটা উঠান বৈঠকে প্রকাশ্যে মার্ডারের হুমকি দেওয়ার পরও প্রশাসন কেবল মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দিল।’

রিটার্নিং অফিসার মাসুদ আলম সিকদার বলেন, ‘নির্বাচনী আইন অনুযায়ী আমরা প্রার্থীকে ডেকে শোকজ করেছি। শনিবার তিনি এর লিখিত জবাব দিয়েছেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেছেন- বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। ভবিষ্যতে এমনটি ঘটবে না। এ ছাড়াও প্রার্থীর ছেলে হুমকিদাতাও মুচলেকায় উল্লেখ করেন- তিনি ভুল করেছেন। আর কখনো এমন বক্তব্য দেবেন না এবং ভবিষ্যতে তার মাধ্যমে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আশরাফুন নাহার বলেন, ‘আমরা তাকে (মিজান) ডেকেছি। সে বলছে বক্তব্যটি তার নয়। এ সংক্রান্ত তিনি একটি জিডিও করেছেন। সে কারণে আমরা তার বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নিতে পারি না। তার পরও আমরা ওই নির্বাচনী এলাকায় যাব, যদি সাক্ষী প্রমাণ পাই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেব।’

থানায় করা জিডির বিষয়ে চান্দিনা থানার ওসি মোহাম্মদ আরিফুর রহমান বলেন, ‘জিডি একটা হইছে। সে করল না তার বাবা করল, করছে আরকি। আর জিডি যে কেউ-ই করতে পারে।’ হত্যার হুমকিদাতার বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি- এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘দেখা যাক কী হয়।’ মিজানুর রহমান অবশ্য বলছেন, ‘এ বক্তব্য আমার নয়। আমার কথার কিছু অংশ সামনে পেছনে বাদ দিয়ে কম্পিউটারে এডিট করে কুচক্রি মহল এমনটি করেছে।’ এক মিনিট দুই সেকেন্ডের ওই ভিডিওর কোন অংশটি আপনার- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোনোটাই আমরা নয়!’

বিধি লঙ্ঘন করে নির্বাচনী প্রচার, নজর নেই প্রশাসনের : চান্দিনার ১২টি ইউপিতে আগামী ৫ জানুয়ারি ভোট। প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত অবধি চলছে তাদের প্রচার-প্রচারণা। তবে এ ক্ষেত্রে নির্বাচনী আচরণবিধির ধারে কাছেও নেই অনেক প্রার্থী ও সমর্থকরা। প্রশাসনের তেমন কোনো ভূমিকা না থাকায় যে যেভাবে পারছেন সেভাবেই প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সরেজমিন গতকাল দেখা গেছে, বাতাঘাসী ও বাড়েরা ইউনিয়নে জীবন্ত ঘোড়া এনে নিজের প্রতীকের প্রচার করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জসিম উদ্দিন ও মো. জালাল উদ্দীন কালা। অধিকাংশ ইউনিয়নে বিশাল আকারে নৌকা বানিয়ে তাতে করা হয়েছে আলোকসজ্জা। নিষিদ্ধ থাকলেও দেয়াল ও বিভিন্ন যানবাহনে পোস্টার সাঁটানো যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। প্রচারে দুই মাইকও ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। রাত ৮টা গড়িয়ে গেলেও কর্ণপাত নেই।

এর আগে গেল বৃহস্পতিবার বিকালে চান্দিনার গল্লাই ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী ইসমাইল হোসেনকে পাঁচটি মোটরসাইকেল, ১২টি পিকআপ, পাঁচটি ইজিবাইক নিয়ে মিছিল করতে দেখা যায়। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এলাকার পোলাপান মিছিল দিছে, মিছিল করলাম আরকি।’ আচরণবিধি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি অনেকটা আশ্চার্য হয়ে বলেন, ‘মিছিল দেওন যাইত না? আমি তো ওইডা জানি না’। আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে ইউএনও আশরাফুন নাহার বলেন, ‘আসলে আমরা যখন বের হই তখন সবাই সতর্ক হয়ে যায়। আর আমি ওসি সাহেবকে বলেছি অভিযান চালিয়ে গাড়িগুলো আটক করতে। আমি ব্যবস্থা নেব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *