ঢাকা: নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে চলমান সংলাপ একটি তামাশা মাত্র দাবি করে গণফোরামের একাংশের নেতারা বলেছেন, ‘এই সংলাপের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত নির্বাচন কমিশন গঠন করা সম্ভব হবে না। ’
শনিবার (০১জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে দলটির নেতারা এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে চলমান সংলাপ বিষয়ে গণফোরামের বক্তব্য তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
দলের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি আজ এক যুগসন্ধিক্ষণে। এই ক্রান্তিকালীন সময়ে মৌলিক প্রশ্ন উঠেছে, ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তে অর্জিত যে গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও শোষণমুক্ত রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেই কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ আজ কোথায়? গণতন্ত্র নিখোঁজ। সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ফণা তুলেছে। শোষণ, দুর্নীতি ও বৈষম্য বাংলাদেশকে গ্রাস করেছে। মানবাধিকার নেই, জনগণের সরকার নেই।
সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ আজ বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করল। কিন্তু ‘প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন’ এই সংবিধানকে পাশ কাটিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে কীভাবে সংবিধান বহির্ভূত ‘সার্চ কমিটি’ সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদের (২) এর সঙ্গে অসামাঞ্জস্যপূর্ণ শুধু নয়, এটা সংবিধানকে উপেক্ষা এবং পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে। এটা করার সাংবিধানিক ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির আছে কি?
তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান। তিনি সংবিধানের তৃতীয় তফসিল ১৪৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শপথ নিয়েছেন, ‘আমি সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করিব। ’ ১১৮ অনুচ্ছেদের উল্লেখিত নির্বাচন কমিশন নিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি তার শপথ যথার্থভাবে পালন করছেন কিনা সে প্রশ্ন যে কোনো নাগরিক উত্থাপন করতে পারেন।
গণফোরামের এই সিনিয়র নেতা আরও বলেন, সংবিধানকে পাশ কাটিয়ে রাষ্ট্রপতির কথিত ‘সংলাপের নাটক’ বাংলাদেশে ইতোপূর্বে দুবার অনুষ্ঠিত হয়েছে, প্রথমবার ২০১৪ সনে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সঙ্গে ও দ্বিতীয়বার ২০১৮ সনে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ সাহেবের সঙ্গে।
তিনি বলেন, এই তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে গণফোরাম দৃঢ়ভাবে বিশ্বস করে, বর্তমান রাষ্ট্রপতির সঙ্গে চলমান সংলাপ একটি তামাশা মাত্র। যার মাধ্যমে কোনো কাঙ্ক্ষিত নির্বাচন কমিশন গঠন করা সম্ভব নয়।
সুব্রত চৌধুরী আরও বলেন, জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠা ও রাষ্ট্রীয়ভাবে সর্বস্তরে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষে একটি দক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন-অপরিহার্য।
এক প্রশ্নের জবাবে সংগঠনটির এই অংশের নবনির্বাচিত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে তিনি বলেছেন রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণপত্র পেয়েছেন। তবে তিনি সংলাপে যাবেন না বলে আমাদের জানিয়েছেন।
ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে যে অংশ রয়েছে সেই অংশের নেতারা রোববার (০২জানুয়ারি) রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে যাবেন বলে আমরা জানতে পেরেছি সে বিষয়ে আপনাদের মন্তব্য কী জানতে চাইলে মন্টু বলেন, আমরা ড. কামাল হোসেনকে একটি চিঠি দিয়েছি। সেই চিঠিতে জানিয়েছি আমরা নির্বাহী পরিষদের সভায় সংলাপে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। গণফোরামের ঐহিত্য ও সুনাম অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে আপনাকে এবং গণফোরামের পক্ষে উক্ত সংলাপে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করছি। তারপরও যদি তারা যায় তাহলে আমরা জনগণের পক্ষে থাকবো।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, দলটির নেতা সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও অ্যাডভোকেট মহসীন রশিদ।