সিলেট:সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) আয়োজিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে সংবর্ধনা দেওয়ার অনুষ্ঠান বর্জন করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বুধবার বিকেলে সিলেট রেজিস্ট্রার কার্যালয় মাঠে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। দুপুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিমানে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামলে সেখানে তাকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বরণ করলেও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ছিলেন না কেউই।
সিলেটের উন্নয়নে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা জানাতে এই সংবর্ধনা আয়োজন করে সিসিক। তবে মেয়র বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী আওয়ামী লীগকে নিয়ে কটুক্তি করেন- এমন অভিযোগ তুলে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান বয়কট করেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
বিষয়টি লক্ষ্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, ‘দেশের উন্নয়নের কথা এখন অন্য দলের লোকেরাও স্বীকার করছেন। ভিন্ন দলের মানুষও প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নকে স্বীকৃতি দিচ্ছেন এতে সবার খুশি হওয়া উচিত।’
মন্ত্রী বলেন, ‘সিলেট নগরী আপনার, আমার, সবার। কে কোন দলের, কোন মতের সেটি দেখার বিষয় নয়। অনেকেই বলেছেন যে আজকের আয়োজন আরিফ সাহেব করেছেন। কিন্তু আমি বলেছি যে আরিফ সাহেব নয়, করেছে সিটি করপোরেশন। আপনাদের লজ্জা লাগা উচিত এই কারণে যে, প্রধানমন্ত্রী এত ভালো কাজ করছেন- একজন অন্য দলের লোক তা স্বীকার করছে। সেটা গ্রহণ করেতেছে। আপনাদের তো ভালো লাগার কথা। আমি তো উসিলা মাত্র। তারা আমাকে নয়, সম্মান দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীকে, যিনি আমাদের প্রতি সদয় হয়ে এতকিছু করছেন। সুতরাং সিলেটের উন্নয়নে সবাই মিলেমিশে কাজ করতে হবে।’
সিলেট নগরীর উন্নয়নে ১২২৮ কোটি টাকা সরকার দিয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘সিলেটের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হচ্ছে। এয়ারপোর্ট অত্যাধুনিক হচ্ছে। স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। শিক্ষাখাতে উন্নয়নের ক্ষেত্রে বৃহত্তর সিলেটের প্রত্যেকটি কলেজে বিশেষ অনুদান দেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে মডেল সিলেট গড়ে তোলা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘টাকা শুধু পাইলেই হয় না। টাকা কাজে লাগাতে হয়। টাকা আগেও দিয়েছিলেন আমাদের অর্থমন্ত্রী। কিন্তু ফেরত গেছে। বর্তমান সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলররা টাকা কাজে লাগাচ্ছেন। যার ফলে সিলেটের উন্নয়ন হচ্ছে।’
এদিকে অনুষ্ঠান বর্জনের ব্যাপারে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আরিফুল হক বিপক্ষ দলীয় লোক। কিছুদিন আগেও এক বক্তৃতায় তিনি বলেছেন যে আওয়ামী লীগের লোকজনের গণ্ডারের চামড়া। আমরা মেয়রের এ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছি এবং তাকে বক্তব্য প্রত্যাহারের জন্য বলেছি। তিনি জনস্বার্থের বাইরে গিয়ে পানির মূল্য কয়েকগুণ বৃদ্ধি করেছেন এবং আমাদের দাবির মুখেও তা কমাননি। তাই সার্বিক দিক বিবেচনায় আমরা বয়কট করেছি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উপর কোনো ক্ষোভ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজকে বক্তৃতায় কিছু কথা বলেছেন শুনেছি। আমাদের যদি কোনো কৈফিয়ত দিতে হয় তবে আমরা তা প্রধানমন্ত্রী এবং দলীয় দায়িত্বশীল নেতাদের দেব। আমরা আমাদের দৃঢ় অবস্থান থেকেই এই অনুষ্ঠান বয়কট করেছি।’
মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত কাউন্সিল বসে নিয়েছে এবং এটি সিটি করপোরেশনের আয়োজন, আমার ব্যক্তিগত নয়। দাওয়াত পেয়েও এই আয়োজন কেউ বয়কট করেছে কী না করেছেন সেটা আমাদের দ্রষ্টব্য নয়। এটা কোনো পলিটিক্যাল বিষয় নয় বরং একান্তই তাদের বিষয়।’
মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।