ওমিক্রনের চেয়েও ভয়ঙ্কর হতে পারে ‘ডেলমিক্রন’

Slider সারাবিশ্ব

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন নিয়ে সমগ্র বিশ্বে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ওমিক্রনের সংক্রমণ ঠেকাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নিয়েছে নানা পদক্ষেপ। এরই মধ্যে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে করোনার নতুন এক ভ্যারিয়েন্ট দেখা দিয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এটির নামকরণ করা হয়েছে ‘ডেলমিক্রন’। গত শনিবার ভারতের হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা ভাইরাসের ডেল্টা ও ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সমষ্টি হলো ডেলমিক্রন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি আলফা বা বিটার মতো আলাদা কোনো রূপ নয়। করোনার দুই রূপ ডেল্টা ও ওমিক্রন একসঙ্গে ভয়াবহভাবে ছড়াচ্ছে। তাই এমন নামকরণ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত ডেল্টা মারাত্মক আকার ধারণ করে। আক্রান্তদের বড় অংশকেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। অসংখ্য মানুষের মৃত্যুও হয়। এ ছাড়া পেশির ব্যথা, চুল উঠে যাওয়া, গন্ধ-স্বাদ চলে যাওয়ার মতো নানা উপসর্গ দীর্ঘদিনই ধরেই ভোগাচ্ছে ডেল্টায় আক্রান্তদের।

এর পর দেখা দিল করোনার সুপার ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। এর সংক্রমণের হার অনেক বেশি হলেও উপসর্গ অপেক্ষাকৃত কম। স্বাদ-গন্ধ এর কারণে চলে যায় না। মাথা ব্যথা, গলা চুলকানো, ক্লান্তি এর প্রধান উপসর্গ। তবে এটি কতটা মারাত্মক হতে পারে, তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে এখনো সংশয় রয়েছে।

বর্তমানে ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে দ্রুতগতিতে বাড়ছে ডেল্টা ও ওমিক্রনের যুগল রূপের সংক্রমণ। বিজ্ঞানীরা একেই বলছেন ডেলমিক্রন। একদিকে ডেল্টার মারাত্মক উপসর্গ, তার সঙ্গে ওমিক্রনের মৃদু উপসর্গ- দুটোর প্রভাবই রয়েছে আক্রান্তদের মধ্যে। তবে ডেল্টার মতো ধীরে ছড়াচ্ছে না এই সংক্রমণ। বরং এর সংক্রমণের হার ওমিক্রনের মতো। ডেলমিক্রনের ক্ষেত্রে যেসব উপসর্গ দেখা দিয়েছে- তীব্র জ্বর, টানা কাশি, স্বাদ-গন্ধের অনুভূতি চলে যাওয়া বা কমে যাওয়া, মাথা ব্যথা, সর্দি, গলা খুশখুশে ইত্যাদি।

যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্য কোনো মিউটেশনের ফলে ওমিক্রনের পর করোনা ভাইরাসের আরও একটি রূপ বেরিয়েছে বলে এখন পর্যন্ত তাদের জানা নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ব্যাপারে কিছু ঘোষণা করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলও (সিডিসি) এখনো এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেয়নি।

দেশে করোনায় আরও ৪ মৃত্যু, শনাক্ত ২৬৮

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৬০ জনে। এ সময় আরও ২৬৮ জনের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। রবিবার বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৫১টি করোনা পরীক্ষাগারে ১৭ হাজার ২৪৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ১৭ হাজার ৭২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক কোটি ১৩ লাখ ৯৩ হাজার ২৫টি। পরীক্ষায় নতুন করে ২৬৮ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ফলে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছ ১৫ লাখ ৮৩ হাজার ২৫৩ জনে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, একদিনে মৃতদের মধ্যে একজন পুরুষ এবং তিনজন নারী। তাদের মধ্যে তিন সরকারি হাসপাতালে এবং একজন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মৃত্যুবরণ করেছেন। এদিকে এখন পর্যন্ত মৃতদের মধ্যে মোট ১৭ হাজার ৯৫১ জন পুরুষ (৬৩ দশমিক ৯৭ ভাগ) ও ১০ হাজার ১০৯ জন নারী (৩৬ দশমিক ০৩ ভাগ) রয়েছেন। এ ছাড়াও গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ২৪৭ জন। এ নিয়ে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৪৭ হাজার ৪২৭ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার এক দশমিক ৫৭ ভাগ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯০ ভাগ এবং শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৭ দশমিক ৭৪ ভাগ। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার এক দশমিক ৭৭ ভাগ। বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃতদের প্রত্যেকেই ষাটোর্ধ্ব। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে তিনজন এবং রাজশাহী বিভাগে একজন রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান থেকে ছড়িয়েপড়া করোনা ভাইরাস পৃথিবীজুড়ে মহামারীতে রূপ নেয়। বাংলাদেশে প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় গত বছর ৮ মার্চ। এর পর একই বছরের ১৮ মার্চ দেশে করোনায় প্রথম মৃত্যুর তথ্য প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *