নির্ধারিত সময়ে বিনামূল্যের বই হাতে পাচ্ছে না প্রায় এককোটি শিক্ষার্থী। দেশের ৬০ হাজার কিন্ডারগার্টেনের এই শিক্ষার্থীরা মধ্য জানুয়ারির আগে কোনো বই পাবে না। আর এই নির্দেশনা উপজেলা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তারাই লিখিত আকারে জানিয়ে দিয়েছেন। অনেকে আবাব অনেকটা গোপনীতা রক্ষা করে মৌখিকভাবে সব শিক্ষার্থীকে মধ্য জানুয়ারির আগে বই না দেয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছেন।
সূত্র জানায়, সময়মতো পাঠ্যবই ছাপা না হওয়ার কারণ দেখিয়ে বেসরকারি পর্যায়ের এসব কিন্ডারগার্টের স্কুলগুলোকে নতুন বই দেয়া হচ্ছে না। এ নিয়ে কিন্ডারগার্টেন মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন ও ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে পড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
দুটি সংগঠনের নেতৃবৃন্দই জানান, লিখিত নোটিশ দিয়ে কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থীদের বই না দেয়ার ঘোষণা রীতিমতো অন্যায় ও অবিচার। কোমলমতি শিশুদের এভাবে নতুন বইয়ের উৎসব থেকে বঞ্চিত করা কোনো ক্রমেই উচিত হবে না। তারা সরকারের এই সিদ্ধান্ত পূনর্বিবেচনারও দাবি জানান।
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরের পর ঢাকার মোহাম্মদুর থানা শিক্ষা অফিসার মোছা: জেসমিন আক্তার বানু স্বাক্ষরিত নোটিশে জানানো হয়েছে, আগামী ১০ জানুয়ারির আগে কোনো একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলেও বিনামূল্যের বই দেয়া হবে না।
তিনি ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসের বরাদ দিয়ে বলেন, শুধু মাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরই বিনামূল্যের বই বিতরণ করা হবে। এছাড়া অন্য কোনো বিদ্যালয়ে বিশেষ করে কিন্ডারগার্টেন স্কুলে বই না দেয়ার জন্যও তিনি হুশিয়ারি দিয়েছেন। পরে সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তের পক্ষ থেকে নোটিশের জানতে চাওয়া হলে মোহাম্মদুর থানা শিক্ষা অফিসার মোছা: জেসমিন আক্তার বানু জানান, সময়মতো পাঠ্যবই ছাপা না হওয়ার কারণেই মূলত এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তিনি আরো জানান, তবে আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। ১০ জানুয়ারির পর সব শিক্ষার্থীরাই বই হাতে পাবে। অন্যদিকে প্রাক প্রাথমিকের বই নিয়ে বর্তমানে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে সে বিষয়েও ব্যাখ্যা দেন এই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, প্রাক প্রাথমিকে বইয়ের সংখ্যা কম। এখানে মাত্র একটি বই পায় শিক্ষার্থীরা। তাই এই বই অল্প সময়ের মধ্যেই ছাপা সম্ভব হবে। আশা করি কেনো সঙ্কট হবে না।
সন্ধ্যায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর থেকে পাঠানো বই বিতরণ বিবরণীতে দেখানো হয়েছে যে, মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেনির বিনামূল্যের পাঠ্যবই উপজেলায় বিতরণ করা হয়েছে শতকরা ৮১ ভাগ। একইসাথে তৃতীয় চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বই বিতরণ করা হয়েছে ৮৮ ভাগ। আর প্রাক প্রাথমিকের বই বিতরণ করা হয়েছে মাত্র ৫০ ভাগ। কিন্তু তিন পাহাড়ি জেলায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুদের জন্য বই পাঠানো হয়েছে শতভাগ।
কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে ১০ জানুয়ারির আগে পাঠ্যবই না দেয়ার ঘোষণায় উদ্বেগ জানিয়েছেন বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টের স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান এম ইকবাল বাহার চৌধুরী।
তিনি নয়া দিগন্তকে জানান, দেশের শতকরা ৯৫ ভাগ শিশু কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পড়ালেখা করে। তারাই ভবিষ্যতে দেশের নেতৃত্বে আসবে। এখন এই শিক্ষার্থীদেরই যদি সময়মতো বই না দেয়া হয় তাহলে এটা হবে আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য। আমরা দাবি করবো সরকার বিষয়টি বিবেচনা করে সবাইকে একই সময়ে পাঠ্যবই দিয়ে বই উৎসবে সবাইকে অংশ নেয়ার সুযোগ করে দেবেন।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের মহাসচিব মো: মিজানুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, দেশের শিশুদের শিক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে প্রধানতম ভূমিকা পালন করে কিন্ডারগার্টেনগুলো। এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সাথে বিমাতাসূলভ আচরণ করা ঠিক হবে না। আমরা চাই সব শিক্ষার্থীদের হাতে সময়মতো বই তুলে দেয়া হোক।