ওমিক্রন বৃটেনে ‘বিগার ওয়েভ’ বা বড় ঢেউ সৃষ্টি করবে। শুধু শুক্রবার গ্রিনিচ মান সময় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছেন কমপক্ষে ২৫ হাজার মানুষ। আগের দিন একই সময়ে এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছিলেন কমপক্ষে ১০ হাজার। বৃহস্পতিবার ওমিক্রন আক্রান্ত হয়ে সাতজন মারা গেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থাকে একটি বরফের চাঁইয়ের প্রান্তবিন্দু বলে মনে করছেন সরকারের উপদেষ্টারা। অন্যদিকে লন্ডনের মেয়র সাদিক খান শহরের হাসপাতালগুলোকে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে ওঠার জন্য একটি ‘মেজর ইনসিডেন্ট’ ঘোষণা করেছেন। হাসপাতালে ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়ে ভর্তির সংখ্যা ৬৫ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ৮৫। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
সরকারের সায়েন্টিফিক এডভাইজরি গ্রুপ ফর ইমার্জেন্সিজ (এসএজিই) বলেছে, তারা এ বিষয়ে প্রায় পুরোপুরি নিশ্চিত যে, প্রতিদিন এই ভ্যারিয়েন্টে হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। তাদেরকে আক্রান্তের মোট সংখ্যার ভিতর আনা হচ্ছে না। তারা আরো সতর্কতা দিয়ে বলেছে, যদি করোনা বিষয়ক আইন আরো কঠোর করা না হয়, তাহলে মডেল যা ইঙ্গিত দিচ্ছে, তাতে ইংল্যান্ডে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩ হাজার মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। এখানে উল্লেখ্য, বৃটেনে টিকাদানে গতি আনার আগে জানুয়ারিতে প্রতিদিন পুরো বৃটেনে হাসপাতালে দিনে ভর্তির সংখ্যা ছিল চার হাজারের উপরে।
এবারও করোনা ভাইরাস, বিশেষ করে এই ভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের কারণে বৃটেনে প্রতিদিন রেকর্ড পরিমাণ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। এই সংক্রমণকে দমিয়ে আনার প্রচেষ্টা হিসেবে ক্ষমতাসীন কনজার্ভেটিভ পার্টি যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তার জন্য বিদ্রোহের মুখোমুখি হতে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে। একটি পত্রিকা এরই মধ্যে খবর দিয়েছে, করোনা বিধিনিষেধের কারণে এরই মধ্যে মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন জনসনের ব্রেক্সিট বিষয়ক মন্ত্রী লর্ড ডেভিড ফ্রস্ট। এ অবস্থায় সরকারের উপদেষ্টারা বলেছেন, ওমিক্রন কি ভয়াবহতা সৃষ্টি করবে তা বলার মতো সময় আসেনি এখনো। যদি তা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে কম সক্রিয় হয় তবুও আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি হবে। এতে হাসপাতালগুলোর ওপর বড় রকমের চাপ পড়বে। লন্ডনের মেয়র সাদিক খান সরকারি এজেন্সিগুলো এবং অধিক পরিমাণ সরকারি সমর্থন ও সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। এমনিতেই শহরে এই সপ্তাহে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ৩০ ভাগ। তিনি বলেছেন, স্বাস্থ্যকর্মীদের অনুপস্থিতির কারণে এই চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। সাদিক খান বিরোধী লেবার দল থেকে নির্বাচিত মেয়র। এর আগে জানুয়ারিতেও তিনি করোনা সংক্রমণের প্রেক্ষিতে তাকে একটি ‘মেজর ইনসিডেন্ট’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন।
দ্য টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, কর্মকর্তারা একটি খসড়া নিয়মের প্রস্তুতি নিয়েছেন। যদি তা চালু করা হয়, তাহলে ইংল্যান্ডে কর্মক্ষেত্র বাদে ইনডোরেও মেলামেশা নিষিদ্ধ হতে পারে দু’সপ্তাহের জন্য। এর অধীনে আউটডোরে একসঙ্গে ৬ জন পর্যন্ত মিলিত হতে পারবেন।
শুক্রবার বৃটেনে এ যাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ড করা হয়। এ সংখ্যা কমপক্ষে ৯৩ হাজার। এরপরের দিন তা সামান্য কমে দাঁড়ায় ৯০ হাজার ৪১৮। ১৮ই ডিসেম্বর থেকে সাত দিনে সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ৪৪.৪ ভাগ।