ঢাকা: একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মােকাবিলায় বিজিবিকে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তােলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় খুব শিগগিরই প্রায় দেড় শত কিলােমিটার অরক্ষিত সীমান্তকে নজরদারির আওতায় আনা হবে বলেও ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। আজ রোববার সকাল ১০ টায় রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজের মাধ্যমে বিজিব দিবস-২০২১ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে তিনি এ ঘোষণা দেন।
মুক্তিযুদ্ধে কৃতিত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইপিআরের ১২ হাজার সদস্য যুদ্ধে সরাসরি অংশ নেন। পিলখানায় তখন পূর্ব প্রস্তুতি ছিলো। ইপিআরের দুজন সদস্য সকল পুলিশ স্টেশনে জাতির পিতার বক্তব্য পৌঁছে দেন। দেশ স্বাধীনের পর জাতির পিতা ইপিআর থেকে এই বাহিনীর নাম পরিবর্তন করে বিডিআর করেন।
বিজিবি দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে অরক্ষিত সীমান্তকে নজরদারির আওতায় আনার ঘোষণাও দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ভারত এবং মায়ানমার সীমান্তে চারটি ব্যাটালিয়ন এবং সুন্দরবন এলাকায় ২টি ভাসমান বিওপিসহ মােট ৬২টি বিওপি সৃজনের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৫শ’ কিলােমিটার অরক্ষিত সীমান্তের মধ্যে ৪ শতাধিক কিলােমিটার সীমান্ত ইতিমধ্যে নজরদারীর আওতায় আনা হয়েছে। খুব শীঘ্রই অবশিষ্ট প্রায় দেড় শত কিলােমিটার অরক্ষিত সীমান্তকে নজরদারির আওতায় আনা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের ৮ জানুয়ারি পিলখানায় তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেন্স এর ১ম
ব্যাচের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। তিনি এ বাহিনীকে যুগােপযােগী করে গড়ে তুলতে এর পুনর্গঠন ও আধুনিকায়নের কাজ শুরু করেন। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার ২০০৯ সাল থেকে এ বাহিনীকে যুগােপযােগী সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তােলার লক্ষ্যে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন-২০১০’ প্রণয়নসহ ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ভিশন-২০৪১’ এর পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
‘এরই ধারাবাহিকতায় বাহিনীকে আরাে গতিশীল করার লক্ষ্যে সমগ্র বাংলাদেশের দায়িত্বপূর্ণ এলাকা পুনর্বিন্যাস করে বিজিবি’র সাংগঠনিক কাঠামােতে ৫টি রিজিয়ন, সেক্টর এবং ইউনিট সৃজন করে কমান্ডস্তরে ভারসাম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে ২০০৯ সাল হতে চলতি বছর পর্যন্ত ৩৩ হাজারের অধিক জনবল নিয়ােগ করা। হয়েছে। নতুন ১৫ হাজার জনবল নিয়ােগের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বিশ্বব্যাপী নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে এবং কর্মক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকল্পে ২০১৫ সাল হতে অদ্যাবধি সর্বমােট ৮৬৮ জন মহিলা সৈনিক ভর্তি করা হয়েছে। আগামী ২০৪১ সাল নাগাদ এ বাহিনীর জনবল ৯২ হাজারে উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে’, যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মােকাবিলায় বিজিবিকে একটি আধুনিক ও বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তােলার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে বিজিবিতে ২টি অত্যাধুনিক Mi-171E হেলিকপ্টার সংযােজনের মাধ্যমে এ বাহিনীকে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তােলা হয়েছে। বিজিবি এখন জল, স্থল ও আকাশ পথে দায়িত্ব পালনে সক্ষম। এ বাহিনীকে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে। এবং দেশের সীমান্ত এলাকায় নিচ্ছিদ্র নজরদারি ও আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনে ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে ‘স্মার্ট ডিজিটাল সার্ভেইল্যান্স এন্ড ট্যাকটিকাল বর্ডার রেসপন্স সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। বিজিবির সাংগঠনিক কাঠামােতে ১২টি আর্মাড পার্সোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি), ১০টি রায়ট কন্ট্রোল ভেহিক্যাল, ২৪৭টি A|| Terrain Vehicle (ATV), উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিভিন্ন সিরিজের ১২টি হাইস্পীড বােট, ২টি ভেহিক্যাল এক্সরে স্ক্যানার মেশিন সংযােজন করা হয়েছে। এছাড়াও বিজিবির সাংগঠনিক কাঠামাে হতে অতি পুরাতন ট্যাংক বিধ্বংসী অস্ত্র বিলুপ্ত করে তদস্থলে ১৪টি আধুনিক ও যুগােপযােগী এন্টি ট্যাংক গাইডেড উইপন্স সংযােজন করা হয়েছে। বিজিবিতে এসব অত্যাধুনিক ও যুগােপযােগী অস্ত্র-সরঞ্জামাদি যুক্ত হওয়ায় এ বাহিনীর আভিযানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সৈনিকদের মনােবল ও কর্মউদ্দীপনা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এছাড়াও প্রশিক্ষণের উপর গুরুত্বারােপ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেকোন পেশাদার বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিজিবি’র একটি মাত্র ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজ রয়েছে যা বায়তুল ইজ্জত, চট্টগ্রামে অবস্থিত। বর্তমানে বিজিবি’র সাংগঠনিক কাঠামােতে জনবল বৃদ্ধি পাওয়ায় একটি ট্রেনিং সেন্টার অপর্যাপ্ত। ফলে বিজিবি সদস্যদের প্রশিক্ষণ পরিচালনার সুবিধার্থে চুয়াডাঙ্গা জেলায় নতুনভাবে আরও একটি বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজ সৃজনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দিন-রাত নিরবিচ্ছিন্ন আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনা এবং নজরদারীর মাধ্যমে দেশের সার্বভৌমত্ব ও সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষাসহ চোরাচালান প্রতিরােধ, মাদক, নারী ও শিশু পাচাররােধের পাশাপাশি বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, সম্প্রতি দূর্গাপুজাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানে দেশের।
অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদান এবং বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমার নাগরিকদের (FDMN) ক্যাম্পের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষা এবং অবৈধ মায়ানমার নাগরিকদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ রােধে বিজিবি’র ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সকল বিজিবি সদস্যের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং ভবিষ্যতে এই সফলতা আরও বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিজিবি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলে তিনি আশা করেন।