গ্রাম বাংলা ডেস্ক: গ্রুপ পর্বের পালা শেষ করে এখন নক-আউট পর্ব। আজ শনিবার ফিফা বিশ্বকাপের প্রথম নক-আউট পর্বের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে অল-লাতিন আমেরিকান দলের মধ্যে। স্বাগতিক ব্রাজিল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান চিলির বিপক্ষে।
বোলো হরিজোন্টের মিনেইরো স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ (বিটিভি) দেশের দুই স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙ্গা টেলিভিশন ও গাজী টিভি।
ব্রাজিল জানে অতীতে এই চিলির বিপক্ষে অসাধারণ পারফর্মেন্স করলেও এবার সেটি খুব একটা কাজে লাগবে না। তাদের বিপে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে নেইমারের দলকে। এর আগে সেলেকাওরা ৬৮ বার চিলির মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে হার মেনেছে মাত্র আট বার। বিশ্বকাপের আসরে অতীতের তিন মোকাবেলার সবকটিতে দারুণভাবে জয় পেয়েছে ৫ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। গোল করেছে ১১টি। এদের মধ্যে ২০১০ সালে দনি আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ম্যাচও রয়েছে। বর্তমান অবস্থাতেই (নক-আইট পর্ব) ব্রাজিলের মুখোমুখি হয়েছিল মার্সেলো বিয়ালসার চিলি। হার মেনেছিল ৩-০ গোলের ব্যবধানে। তবে ব্রাজিলের মিডফিল্ডার উইলিয়ান মনে করেন ব্রাজিলীয় সমর্থকরা এত সহজেই একই ঘটনার সংক্রিয় পুনরাবৃত্তি দেখতে পাবে না। চেলসির এই ফুটবলার বলেন, ‘বর্তমান সময়ে ফুটবলের অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। কিছুদিন আগে অবশ্য ব্রাজিল চিলিকে পরাজিত করেছিল, এটি ভালো দিক। তবে আমাদের অবশ্যই সেটি ভাবলে চলবে না। প্রতিটি ম্যাচেই আলাদা গল্প রচিত হয়। আমি নিশ্চিত, চিলি এবার বেশ অনুপ্রাণিত ও আত্মবিশ্বাসী।’
এবারের বিশ্বকাপে ব্রাজিল ফাইনাল খেলবে বলে চারদিকে রব উঠেছে ঠিকই, কিন্তু গ্রুপ পর্বে ৯ পয়েন্টের মধ্যে মাত্র ৭ পয়েন্ট আদায় করতে পেরেছে স্বাগতিক দলটি।
অপরদিকে রিও ডি জেনিরোর মারাকানা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত গ্রুপ পর্বের ম্যাচে সবাইকে বিষ্মিত করে চিলি ২-০ গোলে হারিয়ে ঘরের টিকিট ধরিয়ে দিয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে। তারা শুধুমাত্র হল্যান্ডের কাছে ২-০ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে। ফলে ‘বি’ গ্রুপের রানার্সআপ হিসেবেই দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠেছে চিলি।
ব্রাজিলের কোচ লুইজ ফেলিপ স্কলারি বলেছেন, চিলির চেয়ে ভিন্ন একটি প্রতিপক্ষ তার পছন্দ ছিল। গত বছর এপ্রিলে মিনেইরাওয়ে দলটির বিপক্ষে প্রদর্শনী ম্যাচে অংশ নিয়ে ২-২ গোলে ড্র করেছিল তার শিষ্যরা। আর নভেম্বরে কানাডায় প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে গিয়ে ২-১ গোলের স্বল্প ব্যবধানে চিলিকে পরাজিত করেছিল।
সোমবার গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ক্যামেরুনের বিপক্ষে ৪-১ গোলে জয় পাওয়া ব্রাজিল দলের হয়ে প্রথম গোলের দেখা পেয়েছিলেন স্ট্রাইকার ফ্রেড। তার মতে চিলির পক্ষ থেকে উন্মুক্ত প্রতিআক্রমণ আসতে পারে। যা পরিচালনা করবে তাদের তিন সদস্যের রক্ষণভাগ। আর এটি থেকে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করবেন আলেক্সিজ সানচেজ ও আরতুরো ভিদাল।
৩০ বছর বয়সী ওই ব্রাজিলীয় বলেন, কৌশলের দিক থেকে চিলি বেশ শক্তিশালী। তারা যথেষ্ঠ প্রত্যয় নিয়ে খেলে থাকে। আক্রমণভাগেও পার্থক্য গড়ে দেয়ার মত খেলোয়াড় রয়েছে তাদের। আমরা তাদের কয়েকটি ম্যাচ দেখেছি। দেখে মনে হয়েছে তারা আক্রমণাত্মক মেজাজে খেলবে। যেটি ব্রাজিলও করবে।’
১৯৬২ সালে টুর্নামেন্ট আয়োজনের পর এখনো পর্যন্ত কোনো বিশ্বকাপেরই কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছতে পারেনি চিলি। ওই আসরে শেষ চার থেকে ব্রাজিলের কাছে হেরেই বিদায় নিয়েছিল তারা। তবে আর্জেন্টাইন কোচ স্যামপাওলি জর্জ এর প্রশিক্ষণাধীন দলটি বেশ আত্ববিশ্বাসী। চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে ব্রাজিলের বিপে অঘটন ঘটানোর মতো ক্ষমতা তাদের আছে।
সানচেজ বলেন, ‘আমরা যদি আগেভাগেই হারের চিন্তা করি, তাহলে আমাদের ঘরেই বসে থাকা উচিৎ। তাদের (ব্রাজিল) প্রতি আমাদের অবশ্যই সম্মানবোধ থাকবে। তরাপরও আমি মনে করি আমরা তাদের হারাতে যাচ্ছি। আমরা বিশ্বকাপে অংশ নিতে এসেছি ইতিহাস গড়ার প্রত্যয় নিয়ে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের আমরা ইতোমধ্যে পরাজিত করেছি। যদিও হল্যান্ডের বিপে আমরা হোঁচট খেয়েছি, এখন আমরা সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের চেষ্টা করব।’
অনুশীলনের সময় চিলির ডিফেন্ডার গ্যারি মেডেলের পায়ের গোড়ালিতে সামান্য ইনজুরি দেখা দিয়েছে। তবে তিনি যদি সুস্থ হয়ে ফিরতে পারেন তাহলে পূর্ণ শক্তি নিয়েই ব্রাজিলের মোকাবেলা করবে চিলি। কারণ হল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের পর বিশ্রামে যাওয়া ভিদালের ফের একাদশে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে ব্রাজিল পর্যবেক্ষণে রেখেছে সেন্টার ব্যাক ডেভিড লুইজকে। অনুশীলনের সময় তার সামান্য পিঠের ব্যথা অনুভুত হয়েছে। আর ক্যামেরুনের বিপক্ষে ম্যাচে বদলী খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নেমে চমক দেখানো ফার্নানদিনহোকে মধ্য মাঠে দেখা যেতে পারে পলিনহোর পরিবর্তে।
এই ম্যাচে জয়ী দলটি ফোর্তালেজায় কোয়ার্টার ফাইনালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে কলম্বিয়া অথবা উরুগুয়ের ।