নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমে যারা গুম হয়েছেন, তাদের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করে পরিবার পরিজনদের মানসিক যন্ত্রণা থেকে উদ্ধার করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে নিউ ইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। বৃহস্পতিবার সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। ১০ই ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ থেকে বাংলাদেশে গুমের শিকার হয়েছে এবং এখনো নিখোঁজ আছে এমন ৮৬ জনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে এইচআরডব্লিউ। তবে গুমের সঙ্গে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও নিরাপত্তা বাহিনীর জড়িত থাকার বিষয়টি বারবার অস্বীকার করেছে বাংলাদেশ সরকার। এইচআরডব্লিউ’র এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, বাংলাদেশ সরকারের উচিত এখনো নিখোঁজ থাকা ও গুম হওয়া মানুষদের খুঁজে বের করার জন্য একটি স্বাধীন ও আন্তর্জাতিক তদন্ত প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উদ্যাপন করা। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের একমাত্র উপায় হচ্ছে নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিণতি সম্পর্কে তাদের পরিবারকে জানানো এবং দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা। ওয়েবসাইটের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জাতিসংঘের সিনিয়র কর্মকর্তা, দাতা সংস্থা ও বাণিজ্যিক অংশীদারদের উচিত বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর সিনিয়র কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্য চাপ প্রয়োগ করা এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, তা নিশ্চিত করা। বাংলাদেশি মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের অন্য যেকোনো সংস্থার তুলনায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মাধ্যমে গুম হওয়ার ঘটনা বেশি ঘটেছে।
২০২০ সালের অক্টোবরে ১০ জন মার্কিন সিনেটর একটি দ্বিপক্ষীয় চিঠি পাঠিয়ে র্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ আনেন এবং তাদের বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ জারির আহ্বান জানান। একইভাবে এ বছরের আগস্টে গোয়ের্নিকা ৩৭ চেম্বার্স ল’ অফিসেজ যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসে একটি আনুষ্ঠানিক আবেদন জমা দেয়। তারা ২০২০ সালের বৈশ্বিক মানবাধিকার নিষেধাজ্ঞা নীতিমালার আওতায় র্যাবের ১৫ জন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করেন। এইচআরডব্লিউ’র মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যান্য দেশের মানবাধিকার সংস্থার উচিত গুম ও অন্যান্য গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আবেদন করা। ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমে গুম হওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের বলা মিথ্যাগুলো কেউ আর বিশ্বাস করে না। তিনি আরও বলেন, এখন প্রশ্ন হচ্ছে দাতা সংস্থা ও জাতিসংঘ এ বিষয়ে কী করে।