বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ২২ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। বুধবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটে ঢাকার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাদের ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায় আনা হয়।
আদালত সূত্র জানায়, আজ বুধবার দুপুর ১২টায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে রায় ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে। রায় শুনতে কুষ্টিয়া থেকে আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ ঢাকায় এসেছেন। রায়ে মামলার সব আসামির মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করেছেন আবরারের বাবা। একইসঙ্গে দাবি করেছেন, এবার যেন কোনোভাবেই রায় ঘোষণার তারিখ আর না পেছানো হয়। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবু আব্দুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, আজ দুপুর ১২টার দিকে আবরার হত্যা মামলার রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য রয়েছে। রায়ে সব আসামির মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করছি।
অপরদিকে, আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, ছেলে হত্যার রায় শুনতে গত সোমবার রাতে ঢাকা এসেছি। এক আত্মীয়ের বাসায় উঠেছি। রায় শুনতে সকালে আদালতে যাবো। আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে, সবার মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রত্যাশা করছি। এবার যেন আর রায় ঘোষণার তারিখ পেছানো না হয়।
গত ২৮শে নভেম্বর রায় ঘোষণার দিন ধার্য ছিল। তবে রায় প্রস্তুত না হওয়ায় সেদিন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান রায় ঘোষণার জন্য ৮ই ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন। আগের ধার্য দিনে রায় ঘোষণা না করার বিষয়ে বিচারক বলেন, রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের আইনজীবীরা যে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন, তা বিশ্লেষণ করে রায় প্রস্তুত করা এখনো সম্ভব হয়নি। রায় প্রস্তুত করতে আরও সময় লাগবে। তাই এ মামলার রায় ঘোষণার জন্য ৮ই ডিসেম্বর দিন ধার্য করা হলো।
নথি থেকে যানা যায়, গত বছরের ১৫ই সেপ্টেম্বর আদালত অভিযোগ গঠন করেন। ২০১৯ সালের ১৩ই নভেম্বর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এতে ৬০ জন সাক্ষীর নামের তালিকা দেয়া হয়। এদের মধ্যে ৪৬ জন সাক্ষ্য দেন। এজাহারভুক্ত ১৯ জনের পাশাপাশি আরও ৬ জনসহ মোট ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। এজাহারভুক্ত আসামিরা হলো- মেহেদী হাসান রাসেল, অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মেহেদী হাসান রবিন, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুল ইসলাম, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত, মোর্শেদুজ্জামান জিসান ও এহতেশামুল রাব্বি তানিম। এদের মধ্যে মোর্শেদুজ্জামান জিসান ও এহতেশামুল রাব্বি তানিম পলাতক। বাকি ৬ জন হলো- ইশতিয়াক আহমেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, এস এম মাহমুদ সেতু ও মোস্তবা রাফিদ। এদের মধ্যে মোস্তবা রাফিদ পলাতক।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ২১টি আলামত ও ৮টি জব্দ তালিকা জমা দেন। গ্রেপ্তার ২২ জনের মধ্যে ৮ জন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা সবাই বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। চলতি বছরের ৮ই সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান অভিযোগ সংশোধনে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন গ্রহণ করে ২৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ পুনর্গঠন করেন।