বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের জন্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগতকারী শেখ হাসিনার পদত্যাগই একমাত্র পথ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি জোট সরকারের সাবেক ১৭৯ জন এমপি। গণমাধ্যমে পাঠানো সাবেক চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে তারা এ মন্তব্য করেন। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, অনতিবিলম্বে আন্দোলনরত ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আপনার নিরাপদ প্রস্থানের পথ বেছে নিন। জাতিকে মহাবিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করুন। বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলা হয়, চলমান গণআন্দোলনকে দমন করার জন্য আপনার পেটোয়া পুলিশ-র্যাব ও বিজিবিকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করে নরহত্যার নির্দেশ দিয়ে গণতন্ত্রের শবযাত্রার আয়োজন সম্পন্ন করেছেন। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিন, গণহত্যা বন্ধ করুন। বিশ্বের কাছে দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাকুন। সাবেক এমপিরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে আদালতের কথা বলছেন সেই আদালতই তাকে রং হেডেড উপাধি দিয়েছে। তিনি যদি বিএনপির অস্তিত্ব বিলীন করতে চান তবে তাকে বলবো, আগের রায়টি আমলে নিন। আদালত স্বীকৃত কোন রং হেডেড ব্যক্তির কাছে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ এবং দেশের ১৬ কোটি মানুষ নিরাপদ নয়। সাবেক এমপিরা বলেন, কার্যালয়ে অবরুদ্ধের পর খাবার সরবরাহ বন্ধ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে যে আচরণ করা হচ্ছে তা বেআইনি, গণতান্ত্রিক ও বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৭, ৩৮, ৩৯ ধারার স্বীকৃত সভা-সমিতি ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সরকারের এ আচরণ সম্পূর্ণ মানবতাবিরোধী, অনৈতিক ও মৌলিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন। সরকারকে আমরা এ ধরনের মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকা এবং খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে খাবার সরবরাহে বাধা না দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। বিবৃতিতে বলা হয়, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের দমন-পীড়ন ও মিথ্যা মামলা দিয়ে বিচ্ছিন্নকরণের সুস্পষ্ট অপচেষ্টা চলছে তা দেশে স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকারকে শুধু ক্ষুণœই করেনি, আইনের শাসনের অপমৃত্যু ঘটিয়ে মুক্ত রাজনীতির পথও রুদ্ধ করেছে। সাবেক এমপিরা বলেন, সারা দেশে সাধারণ মানুষের ওপর পেট্রল বোমা নিক্ষেপ করে হতাহত করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতার সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তারকৃত তারা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী। গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, ফেনীর দাগনভুঞা এলাকায় বিদেশী পিস্তল ও গুলিসহ কায়সার নামে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে আটক করা হয়েছে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে জগন্নাথ দীঘি ইউনিয়নের কেসকি থেকে ৪ঠা ফেব্রুয়ারি পেট্রলবোমাসহ মানিক ও বাবুল নাম দুই যুবলীগ নেতাকে আটক করে পুলিশ। ১১ই ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বোমা তৈরির সময় ছাত্রলীগের রহমত উল্লাহসহ ৪ নেতাকর্মী আহত হয়। একই রাতে ভুলতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা লোকমান হোসেনের বাড়ির একটি ঝুটের গোডাউনে বোমা বানানোর সময় তার বিস্ফোরিত হয়। একই দিন মাগুরা শহরের পারনান্দুয়ালি বাস টার্মিনাল থেকে পেট্রল ভর্তি বোতল ও দিয়াশলাইসহ ঝেরা ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সাজ্জাদ মোল্লা, ছাত্রলীগ কর্মী লিমন ও রানা নামে তিনজনকে আটক করে পুলিশ। ১২ই জানুয়ারি সোহওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জনসভায় তল্লাশি চালিয়ে চারটি বিদেশী পিস্তল ও ৮৬ রাউন্ড গুলি এবং একটি পেট্রল বোমাসহ ৫ জনকে আটক করে পুলিশ। ১৬ই ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের জয়পুরা কলেজ গেটে পিস্তলসহ ওয়াসিম নামে এক যুবলীগ নেতাকে আটক করে পুলিশ। এছাড়া চট্টগ্রাম শহরে আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে পুলিশ। কিন্তু পুলিশ তাদের ছেড়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য মিছিল থেকে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে মারপিটের পর পুলিশের কাছে তুলে দিয়ে তাদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ছাত্রলীগসহ তাদের বিভিন্ন সংগঠনের অর্ধ ডজন নেতাকর্মীকে একই কাজের জন্য পুরস্কৃত করা হয়েছে। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে- ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, তরিকুল ইসলাম, এমকে আনোয়ার, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আবদুল্লাহ আল নোমান, শাজাহান সিরাজ, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম, ড. ওসমান ফারুক, ব্যারিস্টার আমিনুল হক, লুৎফর রহমান আজাদ, ফজলুর রহমান পটল, শাহজাহান ওমর, এম মোরশেদ খান, মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম, অধ্যাপক রেজাউল করিম, সেলিমা রহমান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ, মুশফিকুর রহমান, হারুন আল রশিদ, আকতার হামিদ সিদ্দিকী, মোহাম্মদ শাহজাহান, মিজানুর রহমান মিনু, শাহ আবুল হোসেন, আমানউল্লাহ আমান, এহসানুল হক মিলন, মিজানুর রহমান সিনহা, উকিল আবদুস সাত্তার, গৌতম চক্রবর্তী, মজিবুর রহমান সরোয়ার, কলিমউদ্দিন আহমেদ মিলন, জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, মনিরুল হক চৌধুরী, আবুল খায়ের ভূইয়া, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম, আসাদুল হাবিব দুলু, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, একেএম সেলিম রেজা হাবিব, সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমি, আলী আজগর লবী, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, হারুনার রশিদ খান মুন্নু, সাদেক হোসেন খোকা, জিয়াউর রহমান খান, কাজী আনোয়ার হোসেনসহ চারদলীয় জোট সরকারের সাবেক ১৭৯ জনের নাম রয়েছে।