ল্যাবটির নাম ক্রিমিনাল ইন্টেলিজেন্স এনালাইসিস (সিআইএ)। অপরাধীরা যেন অপরাধ করে পার না পেয়ে যায় এবং একই অপরাধী যেন বারবার অপরামূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত না করতে পারে সে লক্ষ্যে চালু করা হয়েছে এই ল্যাব। দেশ বা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তেই অপরাধী অবস্থান করুক না কেন বিশেষ একটি অ্যাপ ব্যবহার করে একটি মাত্র ক্লিকেই শনাক্ত হবে অপরাধী। জানা যাবে তার গতিবিধি এবং অবস্থান। এবং ওই অপরাধী শনাক্তের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি থানায় এলার্ম আকারে মেসেজ চলে যাবে। জানা যাবে তার অতীতের সকল অপরাধের রেকর্ড। সাইবার ক্রাইম সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রায় ৬০ জন জনবল এবং পৃথক চারটি শাখা নিয়ে সম্প্রতি যাত্রা শুরু করেছে এই গবেষণা ল্যাব। ল্যাবে রয়েছে আইটি, ডেটা কালেকশন অ্যান্ড সার্ভিস সিস্টেম, ফরেনসিক ল্যাব, সাইবার মনিটরিং ল্যাব, ফাইনান্সিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশনসহ একাধিক ল্যাব সেল।
এসব সার্ভিস আবার নির্দিষ্ট একটি ডেটাবেজে কানেকটেড থাকবে। অর্থাৎ একটি টুলসের মধ্যে সকল বিষয়কে সংযুক্ত করা। সাইবার ক্রাইম বাড়ার কারণে এই ল্যাব তৈরির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। অপরাধের ধরন বদলে এখন এনালগ থেকে ডিজিটাল ক্রাইমে রূপ নিচ্ছে। ঢাকা মেট্রোপলিটনের মধ্যে কোন থানায় কি কি ধরনের অপরাধ বেড়েছে সেটা একটা সফটওয়ারের মাধ্যমে একটি প্লাটফরমে নিয়ে আসতে কাজ করছে এই ল্যাব। ভবিষ্যতে ক্রাইম শনাক্ত করে অপরাধীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ এবং অপরাধীকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের জন্য কাজ করছে এই ল্যাব। অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য ল্যাবের এই বিশেষ সফটওয়্যার বড় একটি সহযোগী প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অপরাধীর অপরাধের ডিজিটাল প্রোফাইল না থাকায় একই অপরাধ বারবার করছে। গ্রেপ্তার শেষে জেল খেটে বেরিয়ে তারা একই ধরনের অপরাধে পুনরায় জড়িয়ে পড়ছে।
একই অপরাধ বারবার করছে কিন্তু এই অপরাধের কোনো হিস্ট্রি (ডিজিটাল পেজ) নেই। বাংলাদেশ পেনাল কোডে ইনহ্যান্স পানিশমেন্ট অর্থাৎ একটি লোক যদি একই অপরাধ বারবার করেন সেক্ষেত্রে তার সাজা সাধারণত দ্বিগুণ হয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট অপরাধী এর আগে জেল খেটেছে কিনা, তার সাজা হয়েছে কিনা তা জানা যাবে এই ল্যাবের মাধ্যমে। সেটা হতে পারে ২০ বছর আগের কোনো ঘটনা। যেটা ২০২১ সালে এসে এক ক্লিকে বিশেষ এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে তার অতীতের সকল অপরাধের প্রোফাইল জানা যাবে। অপরাধীর বিরুদ্ধে এই অ্যাপ আদালতকে- এর আগে কোন ধারার মামলায় কতদিন জেলে খেটেছে তা জানিয়ে দেবে। তখন আদালত বিচার কার্যের সময় বিষয়টিকে আমলে নিয়ে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন। এটা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণার কাজ করছে সাইবার অপরাধ বিভাগ। এই ল্যাবকে রিসার্সের ফসল হিসেবে দেখছে সংস্থাটি। এই ল্যাবের মাধ্যমে সমগ্র ডিএমপিকে সিকিউরিটি সাপোর্ট দেয়া হবে।
ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ডিভিশনের উপ-পুলিশ কমিশনার শরিফুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, ২০২১ সালের মার্চ মাসে যাত্রা শুরু করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ডিভিশন। সীমিত জনবল নিয়ে সাইবার অপরাধ দমনে সফলতার সঙ্গে কাজ করেছে তারা। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে যেসব ম্যানুয়াল এবং ফিজিক্যাল ডেটাবেজ রয়েছে সেগুলোকে সমগ্র সাইবার স্পেসের সঙ্গে সংযুক্ত করে একটি প্লাটফরমে নিয়ে আসা। এতে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে থাকা ব্যক্তিকে একটি সিঙ্গেল প্ল্যাটফরম থেকে শনাক্ত করা সম্ভব। অর্থাৎ এই পদ্ধতিতে যতগুলো ডেটাবেজ এবং সফটওয়্যার রয়েছে সবগুলোকে এক প্ল্যাটফরমে নিয়ে আসা। এবং একটি মাত্র ক্লিকেই অপরাধীকে শনাক্ত করা ও শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।