টঙ্গী: অপরিচিতজনের কাছ থেকে আসা একটি ফোন কল রিসিভ করার সঙ্গে সঙ্গে বলতে লাগলো ভাই খবর জানেন? কি খবর? জুয়েলরে নাকি ইচ্ছামত গরুর মতো পিটিয়েছে? পা দুটো ভেঙে দিয়েছে! খবরটা শুনে জিজ্ঞাসা করলাম কোন জুয়েল? বললো, ওয়ার্ড সচিব আনোয়ারুল করিম জুয়েল! কি হয়েছে পুরো ঘটনা জানতে চাইলাম ফোন কলআলার কাছে। ফোন কলআলা বললো, আমি অন্য এক ওয়ার্ডের ওয়ার্ড সচিব, ঘটনার পুরোটা জানতে আনোয়ারুল করিম জুয়েলকে ফোন দেন। ঘটনার সব জানতে পারবেন। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ব্যাপক আলোচিত সমালোচিত ওয়ার্ড সচিব কল্যান পরিষদের সভাপতি ও সদ্য সাবেক গাজীপুর সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের অনুসারী আনোয়ার করিম জুয়েলের কাছে ফোন দিয়ে জানতে পারলাম, আজ সকালে হাতুড়ি ও লোহার রড দিয়ে তাঁকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে একদল লোক। পা দু’টো ভেঙে দিয়েছে হাতুড়ি আর লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে। বুধবার গাজীপুর সিটির গাছা থানার ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের মৈরান ব্রীজের কাছে হামলার এ ঘটনটি ঘটে। আনোয়ারুল করিম জুয়েল গাজীপুর সিটির ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড সচিব। হামলার পর গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে প্রথমে বোর্ড বাজার সুলতান হাসপাতালে আনা হলে ডাক্তাররা তাঁকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে পাঠায়। পঙ্গু হাসপাতালের ডাক্তাররা জানিয়েছেন, পায়ে হাতুড়ি ও লোহার রড দিয়ে আঘাত করে তার দু’টি পা ই থেঁতলে দেয়া হয়েছে। অবস্থা খুবই খারাপ। জাহাঙ্গীর আলম যখন গাজীপুর সিটির মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন, তখন ওয়ার্ড সচিব আনোয়ারুল করিম জুয়েল মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষ নিয়ে ফেসবুকে নানা ধরনের পোষ্ট দিয়ে নানা সমালোচনা করতেন প্রতিপক্ষ নানা জনের বিরুদ্ধে। আনোয়ারুল করিম জুয়েলের ফেসবুকে দেয়া নানা পোষ্টের কথায় ক্ষুব্ধ ছিলেন গাজীপুর সিটির অনেকে। আনোয়ারুল করিম জুয়েলের ফেসবুকের নানা পোস্টে নানা বাকবিতন্ডায় অনেকের সঙ্গে ফেসবুকেই জড়িয়ে পড়েন নানা ঝগড়ায়। এমন নানা ঘটনায় ফেসবুকের মাধ্যমে বহু শত্রুর সৃষ্টি হয় আনোয়ারুল করিম জুয়েলের। মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের একজন খাস অনুসারী হিসাবে ব্যাপক পরিচিত পান আনোয়ারুল করিম জুয়েল। সর্বশেষ আনোয়ারুল করিম জুয়েল, সদ্য সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে ১৫ দিন যাবৎ ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের প্রচারনা চালান। মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষ হয়ে নানা প্রচার-প্রচারণা এবং ফেসবুকে ব্যক্তিগত আক্রমণের সূত্র ধরে তার উপর ক্ষিপ্ত ছিলেন মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিপক্ষরা। মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের ক্ষমতা চলে যাবার এক সপ্তাহের মধ্যে হামলার শিকার হলেন তিনি। মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি গোপন অডিও ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হলে তা কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ আমলে নিয়ে ১৯ নবেম্বর মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সেক্রেটারির পদ থেকে বহিষ্কার করে। পরবর্তীতে ৭ দিনের মাথায় মেয়র পদ থেকেও জাহাঙ্গীর আলমকে বহিষ্কার করে স্হানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এদিকে ওয়ার্ড সচিবকে মারধরের ঘটনার খোঁজ খবর নিতে গাজীপুর মহানগর পুলিশের গাছা থানার ওসি ইসমাইল হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, হামলা ও মারধরের ঘটনা শুনেছি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ থানায় অভিযোগ নিয়ে আসেননি। এদিকে জনকণ্ঠের নিউজের জন্য পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি আহত ওয়ার্ড সচিব আনোয়ারুল করিম জুয়েলকে মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি জানান, বুধবার সকালে মোটরসাইকেল করে সিটির ৩২ নম্বর ওয়ার্ড হয়ে ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে নিজ কার্যালয়ে যাবার পথে মৈরান ব্রীজের কাছে হামলার কবলে পড়েন তিনি। আর অমনি ৮/১০ জন লোক তাঁর উপর হাতুড়ি, লোহার রড ও ইট নিয়ে পা’য়ে ও শরীরে আঘাত করতে থাকে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আনোয়ারুল করিম জুয়েল। মারধর থেকে বাঁচার জন্য ওমাগো ওবাবাগো বলে গগনবিদারী চিৎকার করতে থাকলেও এসময় আশপাশে থাকা শত মানুষ হামলার ঘটনা প্রত্যক্ষ করলেও তাঁর সাহায্যে একটি মানুষও এগিয়ে আসার সাহস পাননি। মাটিতে অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়া জুয়েলকে উদ্ধার করে ট্রাকে করে আহত অবস্থায় বোর্ড বাজারের সুলতান হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। আনোয়ারুল করিম জুয়েল আরো বললেন, এসব মারধর ঘটার পূর্ব মূহুর্তে মৈরান ব্রীজের কাছে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা কিছু লোক তাঁকে দেখে বলছিল, এই যে পাইছি, মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের লোক, আর অমনি হাতুড়ি দিয়ে আমাকে পেটাতে শুরু করে তাঁরা। দু’পায়ে হাতুড়ি দিয়ে পেটাতে থাকা মানুষগুলোর কাছে হাতেপায়ে ধরে জীবন ভিক্ষা চাইতে থাকি, আর বলতে থাকি আমাকে জানে মাইরেন না, আমাকে প্রাণ ভিক্ষা দেন, আমি গাজীপুর ছেড়ে চলে যাবো….
লেখাটি নূরুল ইসলাম,
সাংবাদিক দৈনিক জনকণ্ঠ,
সাবেক সভাপতি টঙ্গী প্রেসক্লাব,
সেক্রেটারি গাজীপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন।
১ ডিসেম্বর ২০২১ তার ফেইসবুক ওয়াল থেকে নেয়া