ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ও বিসিবি সভাপতির পদত্যাগের দাবি ৪০ বিশিষ্ট নাগরিকের

Slider খেলা


ঢাকা: মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুশীলনের সময় পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের পতাকা ওড়ানোর ঘটনাকে রাষ্ট্রীয় পতাকা আইনের লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করে ৪০ বিশিষ্ট নাগরিক বলেছেন, এ ঘটনায় যুব ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল ও বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে পদত্যাগ করতে হবে।

গত রোববার এক বিবৃতিতে তারা একথা বলেন। পাশাপাশি বিবৃতিতে এই ঘটনায় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, বিসিসির ‘নীরবতার’ তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়।

বিবৃতিদাতারা বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট শাসক সংস্থা বিসিবি পুরোপুরি নিশ্চুপ! আমরা অবাক হচ্ছি এ ব্যাপারে সরকারের নীরবতা প্রত্যক্ষ করেও। এমন একটি ঘটনায় তাদের নীরবতা কি জাতি হিসেবে আমাদের দুর্বলতা ও চেতনায় কালব্যাধিকেই ইঙ্গিত করে না? আমাদের চেতনা কি এতোখানিই ক্ষয়প্রাপ্ত ও বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে গেছে? এভাবে চলতে থাকলে আমাদের যে এক সময় প্রতিবাদেরও কোনও সুযোগ থাকবে না- এর চেয়ে মর্মান্তিক নির্জীবতা ও দেউলিয়াপনার উদাহরণ কি পৃথিবীর কোথাও আছে?’

তারা আরও বলেন, ‘এমতাবস্থায়, আমরা মনে করি, ক্রীড়ামন্ত্রী তার দায় এড়াতে পারে না, সরকারও তার দায় এড়াতে পারে না। এত কিছুর পরে আমরা মনে করি না, স্বাধীন বাংলাদেশে এই দায়িত্ব পালনের অধিকার আর তাদের আছে। আমরা ক্রীড়ামন্ত্রী, হকি ফেডারেশন ও বিসিবিকে তীব্র নিন্দা এবং ঘৃণা জ্ঞাপন করছি এবং তাদের পদত্যাগ দাবি করছি।’

পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের এ আচরণকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পতাকা আইনের ‘সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ এবং এই ঘটনার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে ও পরিকল্পিতভাবে’ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমকে ‘অপমান’ করেছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেন তারা।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে মিরপুরের একাডেমি মাঠে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা ওড়ানোর ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে পাকিস্তান ক্রিকেট দল। দুটিকেই ইচ্ছাকৃত ও ষড়যন্ত্র করেই করা হচ্ছে বলে আমরা মনে করি; যা আমাদের সমস্ত লড়াই-সংগ্রাম-অর্জনকে লুট করারই সামিল। এই সমস্ত কিছুই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের সময়ে দেশে ঘটতে দেখা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। যারা এগুলো করেছে তারা কোনভাবেই সৎ উদ্দেশ্যে করেনি।’

এই ঘটনাকে ‘হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই’ উল্লেখ করে তারা বলেন, ‘এমন একটা স্পর্শকাতর বিষয়ে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের পতাকা উত্তোলন সুস্পষ্টভাবেই ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে তারা যে ইচ্ছাকৃতভাবে এটা করেনি, সেটা বলার সুযোগ নেই। কারণ ৭১’এ সরাসরি যুদ্ধে পরাজিত শক্তি পাকিস্তান যে আজও আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশকে মেনে নিতে পারেনি বা স্বীকার করেনি- তা তারা নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করে এবং অতীতেও করেছে। এমন নজীর আমরা পূর্বেও লক্ষ্য করেছি। ৮০’র দশকেও দেখেছি এই বাংলায় ইমরান খানের ধৃষ্টতা!’

নাগরিক ব্যক্তিত্বরা এই ঘটনায় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড তথা পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও ভুল স্বীকারের আনুষ্ঠানিক বার্তা আশা করেন। তারা বলেন, ‘বাঙালির সবচেয়ে গৌরবের মাসই হচ্ছে বিজয়ের মাস, ডিসেম্বর। অত্যন্ত বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, এই বিজয়ের মাসেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে, আমাদের সমস্ত অর্জনকে চূড়ান্তভাবে কালিমালেপন করা হচ্ছে। আমরা দেখতে পারছি, দেশ যখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন করছে ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে, ঠিক সেই সময়ে ঐতিহাসিক পল্টন ময়দান অর্থাৎ আজকের মওলানা ভাসানি স্টেডিয়ামে আগামী ১৬ ডিসেম্বরে ভারত-পাকিস্তান হকি ফাইনাল ম্যাচের ভেন্যু নির্ধারণ করে কলঙ্কিত করা হচ্ছে আমাদের হকিকে।’

বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তানের পতাকা ওড়ানোর প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের নাগরিক ব্যক্তিত্বদের সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন নাগরিক ব্যক্তিত্বরা। সোমবার সকাল ১১টায় জাতীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছেন তারা।

বিবৃতিতে সই করেন-আবদুল গাফফার চৌধুরী, ব্যারিস্টার এম আমির-উল ইসলাম, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, বিচারপতি গোলাম রাব্বানী, বিচারপতি মোহাম্মদ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সংসদ সদস্য আরমা দত্ত, সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান, সেলিনা হোসেন, অধ্যাপক ড. ওয়াহিদুজ্জামান, জেনারেল হারুনুর রশিদ, আবেদ খান, রামেন্দু মজুমদার, জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার, জেনারেল আব্দুর রশিদ, সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, গোলাম কুদ্দুছ, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু ,শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান, অধ্যাপক শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, অধ্যাপক মাহফুজা খানম, ড. আতিউর রহমান, অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, মফিদুল হক, অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, ডা. সারওয়ার আলী, কাজী মুকুল, আসিফ মুনীর, কবীর চৌধুরী তন্ময়, ক্যাপ্টেন শাহাব (বীর উত্তম), অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী শম্পা, কামাল পাশা চৌধুরী, শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ ও রাসেদ চৌধুরী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *