গাজীপুর: জাহাঙ্গীর আলম। গাজীপুর সিটির মেয়র। ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রলীগ। ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগের সমর্থনে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশী ভোট পেয়ে গাজীপুর সদর উপজেলার ভাইস-চেয়ারম্যান হন। সবশেষ গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে গাজীপুর সিটির মেয়র। এখন বহিস্কার।
২০১৩ সালের মেয়র নির্বাচনে আজমত উল্লাহ খানের স্বদলীয় প্রতিপক্ষ হয়ে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। আনারস প্রতীক পেয়ে প্রচারণা শুরুর ক্ষনেই দল তাকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। মেয়র প্রার্থী হয়েও দলীয় প্রধানের মধ্যস্থতায় আজমত উল্লাহ খানের সমর্থনে মাঠে নামতে বাধ্য হন মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। একজন মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম যেদিন আরেকজন মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাহ খানের সমর্থনে প্রচারণায় নামলেন, সেদিনও আজমত উল্লাহর সাথে দাঁড়ানো জাহাঙ্গীর আলম অঝোর ধারায় কেঁদেছিলেন। ওই নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলম আজমত উল্লাহর পক্ষে থাকলেও আজমত উল্লাহ পরাজিত হন। সেই থেকে শত্রুতা তৈরী হয় সঙ্গত কারণেই। দলীয় প্রধান জাহাঙ্গীর আলমকে তার কথা শোনার পুরস্কার হিসেবে গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ দেন। পরবর্তিতে ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনে মেয়র পদের জন্য নৌকা প্রতীকও দেন। ২০১৮ সালেও আজমত উল্লাহ খান নৌকা চেয়েছিলেন কিন্তু পাননি।
২০১৮ সালে জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর সিটির মেয়র হন। সেই থেকে জাহাঙ্গীর আলমের বড় পর্দায় আনুষ্ঠানিক পথচলা শুরু। মেয়র পদে বসে জাহাঙ্গীর আলম আজমত উল্লাহকে জয় করে নিজের কাছে নিয়ে আসলেন। আজমত-জাহাঙ্গীর পরস্পর পরস্পরকে মিষ্টি খাইয়ে এক সাথে চলা শুরু করেন নগরীর উন্নয়নে। জাহাঙ্গীর আলম ভেবেছিলেন আজমত উল্লাহকে জয় করা মানে গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগকে জয় করা। এই জয়কে জাহাঙ্গীর আলম আজীবনের জয় মনে করে কাজ করা শুরু করেন। ৩ বছরে গাজীপুর সিটির যত কাজ হয়েছে প্রায় সব কাজই আজমত উল্লাহ খানকে সাথে নিয়েই করেছেন মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। সম্প্রতি জাহাঙ্গীর আলম বিদেশে যাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি অডিও ছাড়িয়ে যায়। যারা জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় পোষ্ট দিতেন তাদের আইডিতেই প্রথম ওই অডিওও দেখা যায়। অডিও ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলন। শোকজ, জবাব ও শেষে বহিঃস্কার। বহিস্কারের পরদিন ১৯ নভেম্বর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম নিজ বাসভবনে কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং প্রধানমন্ত্রী ও নগরবাসীর কাছে ক্ষমা চান। বর্তমানে মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মেয়র পদ হারাতে পারেন এবং গ্রেফতারও হতে পারেন এমন আশংকা চলমান।
এদিকে জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন গাজীপুরে সরগরম। প্রতি মুহূর্তে নতুন নতুন খবর আসছে ফেসবুকে। বিভিন্ন দলীয় কার্যালয় থেকে জাহাঙ্গীর আলমের ছবি অপসারণকে লাইভ করা হচ্ছে। জাহাঙ্গীর আলম গ্রেফতার হয়েছেন এমন গুজবী খবরও দিচ্ছেন অনেকে। সব মিলিয়ে জাহাঙ্গীর আলম এখন জাতির শত্রু। পাশাপাশি গাজীপুরের মহাশত্রু এটাও বলা যায়। এক সময়ে যারা ঘন্টার পর ঘন্টা জাহাঙ্গীর আলমের বাসায় বা অফিসে দেখা করার জন্য বসে থাকতেন, তাদের কেউ কেউ জাহাঙ্গীর আলমের বহিঃস্কারের পর মিষ্টি বিতরণ করে রাজপথে আনন্দ মিছিলও করছেন। এক সময়ে জাহাঙ্গীরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ কিছু মানুষ এখন ঘৃনা প্রকাশ করছেন অত্যন্ত মন্দভাবে।
জননন্দিত নেতা থেকে জননিন্দিত নেতা জাহাঙ্গীর আলম। ফুলের তোড়া নিয়ে যারা লাইন ধরে বসে থাকতেন তাদের কেউ কেউ এখন অপেক্ষা করছেন জাহাঙ্গীর আলমের হাতে হাতকড়া পড়া ছবি ফেসবুকে পোষ্ট করার জন্য। এটাই যদি রাজনীতির নিয়তি হয় তবে জাহাঙ্গীর আলম হতে পারে শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। ফুল আর হাতকড়ার দূরত্ব এত কাছে এসে যাচ্ছে যে, ক্ষমতায় থাকা না থাকার বিষয় নয়, যে কোন সময় ফুল হাতকড়া হয়ে আসতে পারে। মনে হচ্ছে কান্না যেন শেষই হচ্ছে না। অতিরিক্ত টাকা, হাসিখুশি আর ক্ষমতার হুংকার যে কোন সময় হাতকড়ায় বন্দি হতে পারে, এটা এখন সংস্কৃতিতে পরিণত হতে যাচ্ছে। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি সামাজিক জীবনকেও দূরে ঠেলে দিতে চায় এটা আর অস্বীকার করার সুযোগ নেই।