রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। তার শারীরিক অবস্থা বেশ উদ্বেগজনক বলেই বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন। ব্যক্তিগত একজন চিকিৎসক জানান, বেগম জিয়া ‘ডিকম্পেনসেটেড লিভার’ রোগে ভুগছেন। অর্থাৎ তার লিভার প্রায় অকার্যকর অবস্থায় এসে উপনীত হয়েছে।
বিএনপি বলেছে, খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন। এমন বাস্তবতায় দলের নেতা-কর্মীরা দলীয় নেত্রীর স্বাস্থ্য নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। তাকে বিদেশে নেয়ার অনুমতি চেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবারও সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড দূতাবাসে যোগাযোগ করা হয়েছে।
বিএনপির নির্ভরযোগ্য সব সূত্রই বলছে, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। তিনি বহুরোগে আক্রান্ত। তবে লিভার ও কিডনি রোগে এখন ভোগাচ্ছে বেশি। সাথে হার্টের সমস্যা তো আছেই। সম্প্রতি তার রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ায় চিকিৎসকরা উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন। গত শনিবার রক্তবমি হওয়ার পর ক্রনিক লিভার রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি ধারণা করা হয়। তাই তার লিভার থেকে তরল নিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, তার লিভার প্রায় অকার্যকর।
চিকিৎসকরা বলছেন, তার রক্তে শর্করা অনেক বেশি। রক্তচাপ ওঠানামা করছে। বয়স হয়েছে ৭৬। এত রোগ, সাথে বয়সÑ এসব বিবেচনায় বাংলাদেশে তার উন্নত চিকিৎসা সম্ভব নয়। এ জন্য দেশের বাইরে নিতে হবে। তাহলে তাকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব।
খালেদা জিয়াকে ‘বাঁচাতে’ উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, বিএনপি প্রধান জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন।
একটি সূত্র জানিয়েছে, গত কয়েক দিন ধরেই বিএনপি কিংবা খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে সরকার সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু বিদেশে নেয়ার অনুমতি তারা পায়নি। তার ওপর বেগম জিয়ার পাসপোর্ট নেই। তার পাসপোর্ট তৈরি হলেও এখনো হস্তান্তর হয়নি।
এমন পরিস্থিতিতেও অনুমতি পাওয়া যেতে পারে এমন সম্ভাবনা থেকে দুইটি দেশের সাথে যোগাযোগ করেছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। গতকাল সংবাদ সম্মেলনের পর সিনিয়র নেতারা বৈঠক করেন। সবাই বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন ছিলেন। দুপুরে দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে নেতাকর্মীদের বেশ উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দলের নেতাকর্মীরা নেত্রীর সুস্থতা কামনায় সবার দোয়া চেয়েছেন।
বিএনপি নেতারা মনে করছেন, তাদের সামনে দু’টি পথ খোলা রয়েছে। একটি হচ্ছে, সরকারের সাথে সর্বোচ্চ নমনীয় থেকে আলোচনার জন্য প্রস্তাব করা, আলোচনায় সাড়া না পেলে শক্ত কর্মসূচি দেয়া।
করোনা শুরুর পর খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনে তাকে গত বছরের ২৫ মার্চ নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। তবে শর্ত ছিল, তাকে দেশেই থাকতে হবে। ওই আবেদন নিষ্পত্তি হয়ে গেছে বলে নতুন আবেদন করতে হলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফিরতে হবে বলে যুক্তি দেখান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। কারাগার থেকে বেরিয়ে খালেদা জিয়া ওঠেন গুলশানের বাসা ফিরোজায়। এরপর করোনায় আক্রান্ত হলে চলতি বছরের মাঝামাঝিতে তিনি প্রায় দুই মাস হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এর চার মাসের মাথায় আবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল তাকে। ২৬ দিন হাসপাতালে কাটিয়ে বাসায় ফেরার পাঁচ দিন পর গত ১৩ নভেম্বর তাকে আবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
কাল অনশন কর্মসূচি : আগামীকাল শনিবার বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তাকে বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে বিএনপির উদ্যোগে ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশের জেলা ও মহানগরে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত গণ-অনশন কর্মসূচি পালিত হবে।
বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে গণ-অনশন কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
গতকাল বিকেলে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব অনশন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, ঢাকায় সকাল ৯টা থেকে ৪টা এই কর্মসূচি পালন করা হবে। আমরা যদি ভালো স্থান পাই সেখানে অথবা সবশেষে কোথাও না পাওয়া গেলে আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কর্মসূচি পালন করব।
মির্জা ফখরুল আবারো সরকারের কাছে দাবি রেখে বলেন, খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন। তিনি বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে প্রিয় নেতা। চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হবে নাÑ এটা অমানবিক। আমরা অবিলম্বে তাকে বিদেশে চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি।
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শাহজাহান ওমর, শামসুজ্জামান দুদু, আবদুল আউয়াল মিন্টু জয়নাল আবেদীন, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, আমান উল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, কামরুজ্জামান রতন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, জহির উদ্দিন স্বপন, নাজিম উদ্দিন আলম, আমিনুল হক, রিয়াজউদ্দিন খান নসু, শায়রুল কবির খান প্রমুখ নেতা উপস্থিত ছিলেন।