রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন চিকিৎসকরা। ধারাবাহিকভাবে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়া জটিল রোগের ইঙ্গিত দেয়। কী সেই জটিল রোগ তা নির্ণয় করতে কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে তার লিভার থেকে তরল নিয়ে পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়েছে। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেএম জাহিদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়া একেবারেই ভালো নেই। তার লিভার, কিডনি ও হার্টের জটিলতা বেশি।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা জানাতে আজ বিকালে সংবাদ সম্মেলন করবে বিএনপি। স্থায়ী কমিটির নেতাদের সঙ্গে নিয়ে এতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বক্তব্য রাখবেন। জানা গেছে, সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়াকে
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে অনুরোধ জানানো হবে। পাশাপাশি খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, শনিবার খালেদা জিয়া রক্তবমি করেছেন। রক্তবমি জটিল লিভারের সমস্যা ইঙ্গিত করে। তাই তার লিভার থেকে তরল নিয়ে পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়েছে। আজ পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার কথা। ওই সূত্র আরও জানিয়েছে, সিসিইউতে খালেদা জিয়াকে অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে হচ্ছে। তাকে উন্নত চিকিৎসায় দেশের বাইরে নিয়ে যেতে পরিবারের সদস্যদের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
শনিবার হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে বিএনপি চেয়ারপারসনকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ দিতে পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন জানান তার ভাই শামীম এস্কান্দার।
এদিকে, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসায় পরিবারের পাশাপাশি দলীয়ভাবে উদ্যোগ নিতে চায়। দলটির নেতারা চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে জানান, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এমন জায়গায় গিয়ে ঠেকেছে, উন্নত চিকিৎসায় দেশের বাইরে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। তাদের সামনে দুটি পথ খোলা রয়েছে। একটি হচ্ছে, সরকারের সঙ্গে সর্বোচ্চ নমনীয় থেকে আলোচনার জন্য প্রস্তাব করা, আলোচনায় সাড়া না পেলে শক্ত কর্মসূচি দেওয়া। খালেদা জিয়ার জন্য দৃশ্যমান কোনো কিছু না করলে দলীয় নেতাকর্মীদের ক্ষোভের মুখে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনায় গতকাল নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় জাসাসের উদ্যোগে দোয়া-মাহফিল করা হয়। এ অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকার চাইলেই অসুস্থ খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দিতে পারে। কিন্তু তার বেঁচে থাকার খবরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আতঙ্কিত করে বলে সেই অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। শিগগির বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি না দিলে মানুষ রাজপথে নেমে আসবে বলে হুশিয়ারি দেন এ বিএনপি নেতা।
এ সময় গত মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা জানতে চান রিজভী। তিনি বলেন, মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে আইনমন্ত্রী বলেছেন, বিদেশ যেতে হলে আবার কারাগারে গিয়ে আবেদন করতে হবে। কোন আইনে আছে?
তা হলে শেখ হাসিনা (তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা) মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিনের আমলে কীভাবে গেলেন? আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল কী করে সিঙ্গাপুর চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন? এর আগে দেশের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ আ স ম আবদুর রব কারাগারে থাকা অবস্থায় দেশের বাইরে গিয়েছিলেন। অসংখ্য দৃষ্টান্ত আছে, অসংখ্য উদাহরণ আছে। সরকার যে কোনো মুহূর্তে এই ধরনের অত্যন্ত গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়াকে অনুমতি দিতে পারে। আমরা এখনো আহ্বান জানাচ্ছি দেশনেত্রীকে তার উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিন। খালেদা জিয়া আশু আরোগ্য কামনায় আল্লাহতালার কাছে দোয়া চান রিজভী।
জাসাসের আহ্বায়ক হেলাল খানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব জাকির হোসেন রোকনের পরিচালনায় আরও অংশ নেন বিএনপি নেতা আবদুস সালাম আজাদ, ওলামা দলের নজরুল ইসলাম তালুকদার, জাসাসের যুগ্ম আহ্বায়ক লিয়াকত আলী, আহসান উল্লাহ চৌধুরী, জাবেদ আহমেদ কিসলু, শাহরিয়ার ইসলাম শায়লা, খালেদুজ্জামান জুয়েল, ফরহাদ হোসেন নিয়ন প্রমুখ।