খালেদা জিয়াকে বাসায় থাকতে দিয়েছি, এটাই কি বেশী না! ফুল দিয়ে বরণ করব?—প্রধানমন্ত্রী

Slider রাজনীতি


ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বাসায় থাকতে দিয়েছি, এটাই কি বেশী নয়! হত্যাচেষ্টাকারীকে কি ফুল দিয়ে বরণ করব?

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার প্রতি বছর ডিজেলে ২৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ বুধবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স সফর সম্পর্কে অবহিত করতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। সংবাদকর্মীরা যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হল থেকে।

অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বাসায় থেকে চিকিৎসা করতে দেওয়া হচ্ছে, এই তো বেশি। যে আপনাকে হত্যা করতে চায়, তাকে আপনি কি ফুলের মালা দিয়ে নিয়ে আসবেন- এমন প্রশ্নও রাখেন সরকারপ্রধান।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমাকে মারতে অনেক চেষ্টা করেছে। এরপর খালেদার ওপর আমায় মায়া দেখাতে বলেন। আমার হাতে যেটুকু আছে, তার মাধ্যেমে তাকে বাসায় থাকার ব্যবস্থা করেছি। ওনারা ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের শেল্টার দিয়েছেন। বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়েছেন।’

প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে বুধবার বিকাল ৪টায় সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শনিবার রাত ২টার দিকে তাকে হাসপাতালের কেবিন থেকে সিসিইউতে নেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনায় দুদফা বৈঠক করে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড। এই বৈঠকে বিদেশি কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। এতে তার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা ও পরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা করা হয়। মেডিকেল বোর্ডের সদস্যদের বরাত দিয়ে পারিবারিক সূত্র জানায়, সবদিক থেকে স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় মেডিকেল বোর্ড যত দ্রুত সম্ভব খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে নিতে পরিবারকে পরামর্শ দিয়েছে। সে অনুযায়ী সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে বিদেশে নিতে আবারও সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন তারা।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে তাকে বাইরে পাঠানো নিয়ে যে আলোচনা চলছে, সে বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার বক্তব্য জানতে চান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার হাতে যা ছিল, তা দিয়ে তাকে বাসায় থাকার ব্যবস্থা করেছি। এখন এটা সম্পূর্ণ বিচার বিভাগের বিষয়।’

উল্লেখ্য, দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে খালেদা জিয়া ২০০৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান। করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে গত বছরের ২৫ মার্চ সরকার শর্তসাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। এ পর্যন্ত তিন দফায় খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়। তবে বিএনপির নেতারা খালেদা জিয়ার শর্তসাপেক্ষে এ মুক্তিকে ‘গৃহবন্দি’ বলছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার আবেদন করা হলেও সরকার তা নাকচ করে দেয়। তাকে দেশে থেকেই চিকিৎসা নিতে হবে বলে শর্তও দেওয়া হয়েছে।

এদিকে অন্যান্য বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের প্রতি যে দায়িত্ববোধ, তা নিয়ে আমরা সবসময় সচেতন। করোনাকালে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত কৃষক থেকে শুরু করে কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষ নেই যাদের আমরা অর্থ দিয়ে সাহায্য করিনি।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে, সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। উৎপাদন বাড়ানোর সব ব্যবস্থা নিয়েছি। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে। আমাদের তেল কিনে আনতে হয়।’

উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রাখেন কত টাকা ডিজেলে ভর্তুকি দিতে হয়। পরে তিনি নিজেই উত্তর দেন। তিনি বলেন, ‘২৩ হাজার কোটি টাকা ডিজেলে ভর্তুকি দিতে হয়। বিদ্যুৎসহ সব মিলিয়ে ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে থাকি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষকদের জন্য সারের দাম আমরা কমিয়েছি। যে সার ৯০ টাকা ছিল তা কমিয়ে ১৫-১৬ টাকা করেছি। কৃষিতে প্রতিটি ক্ষেতে সহায়তা দিয়েছি। কার্ড করে দিয়েছি। এখন কৃষক ১০ টাকায় অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। যার মাধ্যমে ভর্তুকির টাকা সরাসরি তাদের কাছে যায়।’

অনেক উন্নত দেশে খাদ্যের জন্য হাহাকার করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘লন্ডনে সুপারমার্কেটে সাপ্লাই নেই। খাবার জিনিস পর্যন্ত পাওয়া যায় না। তবে বাংলাদেশের কোনো খাদ্যের হাহাকার নেই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *