দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের আগে দেশের বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। সহিংসতা মোকাবিলায় নির্বাচন কমিশন কিংবা প্রশাসনকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। ফলে তৃণমূলে হানাহানি লেগেই ছিল। এতে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে এক ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়। উদ্বেগ তৈরি হয় সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও। এমন প্রেক্ষাপটে তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচন সামনে রেখে টনক নড়ে প্রশাসনের। এবার হানাহানিমুক্ত নির্বাচন করতে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে দেশজুড়ে অবৈধ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে পুলিশের সব ইউনিট। মাঠে নেমেছে র্যাবও। এ বিশেষ অভিযানে লাইসেন্সধারী বৈধ অস্ত্র ও গুলির অবৈধ ব্যবহার হচ্ছে কিনা, মাঠ পুলিশকে তা কঠোরভাবে দেখতে বলা হয়েছে।
পুলিশসহ একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ নভেম্বর পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ৬৪ জেলা পুলিশ সুপার, সব মহানগরের পুলিশ কমিশনার ছাড়াও র্যাবের মহাপরিচালককে ১৫ নভেম্বর থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত এক সপ্তাহ বিশেষ অভিযান চালাতে লিখিত নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই চিঠিতে অবৈধ অস্ত্র, মাদক উদ্ধার এবং চোরাই ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন
মোটরসাইকেল আটক ও উদ্ধার করতে বলা হয়। এ ছাড়া নিয়মিত মামলার আসামি গ্রেপ্তার ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিলেও বিশেষ অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই নির্দেশ পেয়ে ইতোমধ্যে মাঠ পুলিশ ও র্যাব দেশজুড়ে বিশেষ অভিযানে নেমেছে।
দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন ঘিরে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা সহিংসতায় ধারালো অস্ত্রের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারও হয়। এতে একের পর এক প্রাণহানি ও রক্ত ঝরার ঘটনা ঘটে, যা ভোটের দিন পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এ ঘটনা ভাবিয়ে তোলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, সরকার তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। সহিংসতার ঘটনাগুলো নির্বাচন ঘিরে কিনা, তা তদন্তের দাবি রাখে উল্লেখ নির্বাচন কমিশন পুরো ঘটনার দায় এড়িয়ে যায়। তবে তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনকে কিছুটা নড়াচড়া করতে দেখা গেছে। গত সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা সাংবাদিকদের জানান, তারা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. কামরুজ্জামান আমাদের সময়কে বলেন, সামনের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে কেউ যেন অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করতে না পারে, তা কঠোরভাবে দেখতে পুলিশের সব ইউনিটকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সীমান্ত দিয়ে যেন কোনো অবৈধ অস্ত্র ও গুলির চালান না ঢোকে, সেদিকে নজর দিতে সীমান্তবর্তী জেলার পুলিশ সুপারদের বলা হয়েছে।
বিশেষ অভিযান সম্পর্কে জানতে চাইলে ফেনী জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন আমাদের সময়কে বলেন, ‘বৈধ অস্ত্র-গুলির অবৈধ ব্যবহার হচ্ছে কিনা, তা জানতে থানার গান রেজিস্টার ধরে তদন্ত করা হচ্ছে। আমরা দেখছি বৈধ অস্ত্রধারীর বিরুদ্ধে কোনো গুরুতর অপরাধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে কিনা। কেউ অস্ত্র-গুলি ব্যবহারের সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারলে আমরা বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেব।’
এদিকে বিশেষ অভিযানের প্রথম দিনে কত অবৈধ অস্ত্র-গুলি পাওয়া গেছে, কী পরিমাণ মাদক উদ্ধার হয়েছে, কতজন নিয়মিত মামলার আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে, কতটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল হয়েছে, তা পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, দুই ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতায় এ পর্যন্ত শতাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এবার দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচন ঘিরে দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষ ও হামলায় প্রকাশ্যে অস্ত্রের ব্যবহার হয়। ১৪টি জেলায় সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা বেশি ছিল। দুই ধাপে কী কী কারণে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তার কারণ অনুসন্ধান করে সে মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিটকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা আমাদের সময়কে বলেন, ‘আগে তো স্থানীয় নির্বাচনে এমন সহিংসতা ছিল না। বর্তমানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন হওয়ায় উত্তেজনা বেশি। ক্ষমতার দাপট দেখাতে গিয়ে একে অন্যকে আক্রমণ করছে।’
নির্বাচনের আগে অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধারে ব্যবস্থা নিলে প্রাণহানি কমানো সম্ভব হতো কিনা- জানতে চাইলে সাবেক আইজিপি বলেন, ‘সেটি হয়তো কিছুটা হতো। এখন এটিকে শিক্ষা হিসেবে নিয়ে ভবিষ্যতে নির্বাচনে সহিংসতা কমিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘিরে যশোরের শার্শা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, সিলেটের গোয়াইনঘাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার তেলটুপি ও ভারতের মিজোরাম সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অস্ত্রের চালান বেশি আসছে।