গাজীপুর: ধর্ষণ মামলার ভয় দেখিয়ে গাজীপুর জেলা সদর উপজেলার এক স্কুল মালিকের কাছে ১০ লাখ টাকার চাঁদা দাবি করে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এই নিয়ে গাজীপুর সদর উপজেলার ভাওয়াল মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের অফিস কক্ষে একাধিক সালিশ দরবার হয়। চাঁদার টাকা দিতে না পারায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নং ওয়ার্ড মেম্বার মোজাম্মেল হক মজু স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও তার আত্মীয় স্বজনের কাছে অসংখ্যবার মোবাইলে ফোন করে টাকা দাবী করেন। ঘটনার প্রতিকার চেয়ে শিক্ষকের স্ত্রী গাজীপুর আদালতে ২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত নাম কয়েকজনের নামে একটি মোকদ্দমা দায়ের করেন।
আসামীরা হলেন, ১। লিমা খাতুন, (২৫) পিতা-শেখ শওকত আলী, গ্রাম-কাঠালতলা, থানা- ফকিরহাট, জেলা- বাগেরহাট। বর্তমান ঠিকানা- ভাওয়াল মির্জাপুর ( আব্দুর রহমান এর বাড়ীর ভাড়াটিয়া) গাজীপুর সদর, গাজীপুর। ২। মো: মোজাম্মেল হক মজু মেম্বার (৫০), পিতা- মৃত বাছেত আলী, ভাওয়াল মির্জাপুর, গাজীপুর সদর গাজীপুর। বিজ্ঞ আদালত শুনানি শেষে স্পর্শকাতার এই ঘটনাটি তদন্ত করতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেসটিকেশন (পিবিআই) কে নির্দেশ দেন। গাজীপুরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ইলিয়াস রহমানের আদালত সূত্রে এই খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।
আজ শনিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পিবিআই এর তদন্ত কর্মকর্তা।
সূত্র জানায়, ৩ অক্টোবর শিক্ষকের স্ত্রী বাদী হয়ে উক্ত আদালতে এই মোকদ্দমা করেন ( সি আর মোকদ্দমা নং ২৩০/২০২১)। বিজ্ঞ আদালত বাদীনির বক্তব্য গ্রহণ করে অভিযোগের পক্ষে প্রয়োজনীয় কল রেকর্ড ও তথ্য প্রমান প্রাপ্তি সাপেক্ষে এই আদেশ দেন।
এ বিষয়ে গাজীপুরে পিবিআইয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক হাফিজুর রহমান জানান, আদালতের নির্দেশে বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত শেষ হলে ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে পারব।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, গাজীপুর সদর উপজেলার ভাওয়াল মির্জাপুর ইউনিয়নের একটি স্কুলে চাকুরীচ্যুত এক শিক্ষিকাকে স্থানীয় মেম্বার সহ বেশ কিছু লোকজন নিয়ে চাকুরীতে পূণর্বহালের তদবির করেন। স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে চাকুরীচ্যুত ঐ শিক্ষিকাকে পূণর্বহাল করতে স্কুল কর্তৃপক্ষ অপারগতা প্রকাশ করেন। এরপর ঐ শিক্ষিকাকে নিয়ে ইউপি সদস্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে ধর্ষণের অভিযোগ এনে দেনদরবার করেন। ঐ দরবারে একাধিক জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় জয়দেবপুর থানার একজন পুলিশ কর্মকর্তা একাধিক শিক্ষক, শিক্ষক সংগঠনের নেতা ও অভিযুক্ত শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
সালিশ বৈঠকে ১০ লাখ টাকা না দিলে ধর্ষণ মামলা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। পরবর্তী সময় ইউপি সদস্য শিক্ষককে ও শিক্ষকের একাধিক লোকজনকে ফোন করে টাকা দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। ঘটনার প্রতিকার চেয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের স্ত্রী ও ঐ স্কুলের শিক্ষক বাদী হয়ে বিজ্ঞ আদালতে ঐ মোকদ্দমা দায়ের করেন।
এদিকে জয়দেবপুর থানায় চাকুরীচ্যুত শিক্ষিকাকে বাদী করে স্কুল মালিক সাদিকুল ইসলাম সেলিম এর বিরুদ্ধে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাদীর স্বামী সাদিকুল ইসলাম সেলিমের সাথে আরেকটি স্কুলের বিরোধ চলছিল দীর্ঘ সময়। অভিযুক্ত ইউপি মেম্বার সাদিকুলের স্কুলের পরিচালনা পরিষদের সাবেক সদস্য ছিলেন। স্কুলটি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হওয়ার জন্য ঐ মেম্বার সাদিকুল ইসলাম সেলিমকে চাপ সৃষ্টি করেন। মূলত স্কুলটি দখলে নিতে না পেরে ঐ ইউপি মেম্বার সেলিমের প্রতিদ্বন্ধি স্কুলের মালিক পক্ষের সাথে মিশে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে স্কুলটি উচ্ছেদ করার জন্য এই মিথ্যা ধর্ষণ মামলা সৃষ্টি করেন। ধর্ষণ মামলার এজাহারে আপোষ মিমাংসার কথাও বলা আছে।