রস পেতে খেজুর গাছের যত্নে ব্যস্ত গাছিরা

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

চারিদিকের কুয়াশায় জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। আর মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে শীত শুরু হবে পুরোদমে। এরই মধ্যে ভোরে লতা-পাতা আর ঘাসের উপর ঝরে পড়ছে শিশির বিন্দু। গ্রামের চাষিরা ছুটে যাচ্ছে ফসলের ক্ষেতে কেউ বা আবার বপন করবে হলুদের অপরুপ সৌন্দর্য্যের সরিষা। এমন মৌসুমে শীত শুরুর সাথে সাথে খেজুর গাছ প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছে গাছিরাও।

প্রকৃতির ছোঁয়ায় সারা দেশের ন্যায় এবার একটু আগেই শীতের দেখা মিলছে টাঙ্গাইলের নাগরপুরে। দিনে সূর্যের খরতাপ আর রাতে কুয়াশার সাথে বইছে হিমেল হাওয়া। ভোর থেকেই ব্যস্ত গাছিরা দা দিয়ে খেজুর গাছ কাটছে। ক’দিন পরেই গাছ থেকে প্রক্রিয়াজাত করা খেজুরের রস দিয়ে তৈরি করা হবে গুড় ও পাটালি। শীতের সকালে গ্রামের গৃহস্থ বাড়িতে খেজুরের রস দিয়ে বানানো হবে মুখরোচক পিঠা, পায়েস, ক্ষীরসহ নানা প্রকার সুস্বাদু ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি খাবার। কেউ বা আবার হাক ডাক দিয়ে বিক্রি করবেন খেজুরের ঠাণ্ডা রস।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার ঘিওরকোল, সহবতপুর, কলমাইদ, কাউয়াখোলা, ধুকুড়িয়া, শুনশীসহ আশপাশের গ্রামের কাঁচা পাকা মেঠো রাস্তার পাশে সারি দিয়ে লাগানো খেজুর গাছ কাটতে ব্যস্ত গাছিরা। এ সময় তারা বিশেষ কায়দায় কোমরে রশি বেঁধে খেজুর গাছের উপরে উঠে। গাছের উপরের অংশের ছাল বের করার এক সপ্তাহ পরেই আবার হালকা কেটে তাতে নল লাগানো হয়। পরে সেখান থেকে রস সংগ্রহ করা হয়। কয়েক দিনের মধ্যেই পুরোদমে রস সংগ্রহ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন গাছিরা।

খেজুর রস সংগ্রহকারী গাছি শরিফুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, খেজুরের রস সংগ্রহের বাপ-দাদার ঐতিহ্যবাহী পেশায় দুই ছেলে নিয়ে প্রায় ১২ বছর ধরে কাজে নিয়োজিত আছি। আমরা রাজশাহী থেকে প্রতি বছর এ উপজেলায় প্রায় আট বছর ধরে শীত মৌসুমে কাজ করছি। স্থানীয়ভাবে গাছি না থাকায় এলাকাবাসীর কোনো আপত্তি নেই। খেজুরের রস দিয়ে আগাম গুড় ও পাটালি বানাতে পারলে লাভ বেশি হয়। সেই আশাতেই চলতি বছরও গুড় তৈরির দিকে ঝুঁকছে গাছিরা।

তিনি আরো বলেন, ১৮-২০ দিন হয়েছে কাজ শুরু করেছি। গাছের ময়লা ও অপ্রয়োজনীয় ডালপালা ছেঁটে ফেলা হয়েছে। ধারালো দা দিয়ে খেজুর গাছের সোনালি অংশ বের করে নোলন স্থাপনের কাজও প্রায় শেষ। আগামীকালই গাছে লাগানো হবে মাটির পাতিল। এরপরই শুরু হবে সুস্বাদু খেজুর রস সংগ্রহের কাজ। তা দিয়ে তৈরি হবে গুড় ও পাটালি।

গাছিরা বলেন, গাছ একবার ছাঁটলে তিন-চার দিন রস সংগ্রহ করা যায় এবং পরবর্তীতে তিন দিন শুকাতে হয়। এভাবে কাটলে গাছের রস সুমিষ্ট হয়। রস সাধারণত কার্তিক থেকে ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সংগ্রহ করা যায়। এ রস থেকে তিনি গুড় ও পাটালি তৈরি করে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করেন। এমনকি দুরদুরান্ত থেকেও পরিবারের জন্য এখান থেকে খাটি গুড় সংগ্রহ করে নিয়ে যায় ক্রেতারা।

তারা আরো বলেন, ভোরে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে তা জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করা হয়। গাছভেদে প্রতি গাছ থেকে দুই থেকে পাঁচ কেজি রস হয়। প্রতি কেজি রস এক শ’ টাকা আর গুড় বিক্রি হয় চার শ’ টাকায়।

নাগরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মতিন বিশ্বাস নয়া দিগন্তকে জানান, খেজুরের রস এবং গুড় সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি ঐহিত্যবাহী সুমিষ্ট খাবার। দিন দিন খেজুর গাছের সংখ্যা কমছে ফলে গাছিও তেমন নেই। উত্তরাঞ্চল থেকে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও খেজুর রস সংগ্রহ করার জন্য গাছিরা এসেছে এবং রস সংগ্রহের প্রস্তুতিও প্রায় শেষ। উপজেলায় প্রায় এক হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। কৃষকরা আগ্রহী হলে খেজুর গাছ পরিচর্যায় প্রশিক্ষণ এমনকি উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *